বরিশালের ২৮টি কেন্দ্র নিয়ে অভিযোগ থাকলেও স্থগিত ১৫টি
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে ২৮টি কেন্দ্র নিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিল ইসির পর্যবেক্ষক টিম। একই তালিকা বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাও পাঠিয়েছিলেন। সেই তালিকা থেকে কারণ যাচাই-বাছাই করে সিইসিসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা সিদ্ধান্ত নেন ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করার।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে আমাদের কাছে সম্ভবত ২৮টি কেন্দ্রের একটি তালিকা পাঠিয়েছিল আমাদের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক টিম এবং রিটার্নিং অফিসার। কেন কেন্দ্রগুলোর নাম পাঠানো হলো তার কারণও সেখানে লেখা ছিল। সেই তালিকা থেকে আমরা কারণ যাচাই করে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে দেই।’
অনিয়মের অভিযোগ আসার পরেও কেন বাকি ১৩টি কেন্দ্রের ফলাফলও স্থগিত ঘোষণা করা হয়নি-এমন প্রশ্নে এই কমিশনার বলেন, ‘করিনি, কারণ বাকিগুলো না করলেও হয় তাই। যেমন ধরেন, নারী কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের আনাগোনা। এটাকে কেন্দ্র দখল অথবা ভোট জালিয়াতি বলা মুশকিল। আমরা সবাই মিটিংয়ে বসে এসব নিয়ে আলোচনা করে তারপরে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করি।’
এসব বিষয়ে ইসির একজন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে কথা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সকাল থেকেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৮০ ভাগ ভোটকেন্দ্র দখল করে নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর বরিশালে দায়িত্বরত ইসির কর্মকর্তারা সেই কথা নির্বাচন কমিশনে জানান। তখন নির্বাচন কমিশন থেকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয় তাঁদের। পরে তাঁরা ভয়ে বলেন আর যাই বলেন বিভিন্ন কারণে আর লিখিত তালিকা দিতে সাহস করেননি। কারণ লিখিত বিষয় তো নথিভুক্ত থাকে। তারপর তারা ২৮টি কেন্দ্রের তালিকা পাঠান কমিশনে।’
এসব নিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মজিবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছিলাম নির্বাচন কমিশনে। তখন তারা আমাদের লিখিত তালিকা দিতে বলেন। এরপর আমি প্রিজাইডিং অফিসারদের তালিকা দিতে বলি। তখন অনেকেই তালিকা দেননি। এরপর আমাদের নজরে যে কেন্দ্রগুলোতে অনিয়ম দেখেছি সেই কেন্দ্রগুলোর তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করা হয়। বাকিগুলো কেন করেনি সেটি কমিশন বলতে পারবে।’
গতকাল বিকেলে ইসির নির্বাচনী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মেজর রাজু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কমপক্ষে ৮০ ভাগ ভোট কেন্দ্রই দখল হয়ে গেছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনে ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করা ১৫টি কেন্দ্রের মোট ভোটার ২৯ হাজার ৯২৩ জন। কেন্দ্রগুলো হলো বরিশাল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ (মহিলা), ফারিয়া কমিউনিটি সেন্টার (পুরুষ), সরকারি মহিলা কলেজ (মহিলা), বরিশাল সিটি কলেজ (পুরুষ), আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ টেক্সাটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-১ (পুরুষ), শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ টেক্সাটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-২ (মহিলা), উদয়ন প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), সাবেরা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (মহিলা), আর এম সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), রূপাতলী জাগুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রূপাতলী জাগুয়া ডিগ্রি কলেজ ও সংলগ্ন রূপাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সখিনা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যাললের উত্তর (মহিলা) এবং নয়গাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সংলগ্ন ইন্দ্রকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, মোট ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। বাকি ১৬টির মধ্যে একটি ভোটগ্রহণ প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক বন্ধ করা হয় এবং ১৫টির ফলাফল স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পেয়েছেন এক লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. মজিবর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট। বাকি ১৬ কেন্দ্রের মোট (৩১,২৭৭) ভোটারের চেয়ে বেশি ভোটে সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ কারণে সাদিক আবদুল্লাহকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।