শিক্ষার্থীদের কথা রেখে গাড়ি ঘুরালেন বাণিজ্যমন্ত্রী
উল্টো পথে যাচ্ছিল বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি। আটকে দিল শিক্ষার্থীরা। গাড়ি থেকে নেমে এলেন মন্ত্রী। শুনলেন শিক্ষার্থীদের কথা। উল্টো পথ থেকে ফিরে যেতে মন্ত্রীকে অনুরোধ জানাল খুদে আন্দোলনকারীরা।
বেশ কিছুক্ষণ কথোপকথনের পর কথা রাখলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে বলেন তাঁর চালককে। আর পেছন থেকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এর পরই এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
ঘটনার সময় তোফায়েল আহমেদ গাড়ি থেকে নেমে এলে তাঁকে ঘিরে ধরে শিক্ষার্থীরা। বলতে থাকে, ‘আইন সবার জন্য সমান স্যার। আইন সবার জন্য সমান। স্যার এই যে প্রমাণ। স্যার দেখেন, লাইসেন্স নাই। উই ওয়ান্ট জাস্টিস। উই ওয়ান্ট জাস্টিস। বিচার চাই। বিচার চাই।’
এ সময় মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। তারা বলে, ‘স্যার, একটা কথা বলি স্যার। একটু আগে, একটা গাড়িতে কোনো লাইসেন্স ছিল না। ওইখানে আমরা পুলিশকে বলছি কি, একটু দেখেন কিছুক্ষণ গাড়িটা। উনি টাকা খেয়ে গাড়িটা ছেড়ে দিছে। বাংলাদেশের পুলিশের এই অবস্থা কেন স্যার?’
কথোপকথনের পুরোটা সময় মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কথা শুনছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। আর শিক্ষার্থীরাও তাদের কথাগুলো মন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলে।
এক শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদকে বলে, ‘স্যার, আপনাদের কাছ থেকেই সবাই শিখে। স্যার, আপনি বঙ্গবন্ধুর আমলে ছাত্রনেতা ছিলেন। স্যার, আপনি বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনের সময় ছিলেন। আমরা চাই আপনি সুষ্ঠু একটা রায় দিবেন স্যার। স্যার, একটা রিকুয়েস্ট করি স্যার প্লিজ। এটা রং সাইড। এটা ওইদিক দিয়ে যাওয়ার পথ, এদিক দিয়ে না স্যার। উই রিকুয়েস্ট ইউ, প্লিজ গো ব্যাক।’
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি রং সাইডে যাই না। তোমাদের জন্য আমি নামছি গাড়ি থেকে। তোমাদের সাথে কথা বলার জন্য নামছি। নাইলে এদিক দিয়ে আসতাম না।’
কথাগুলো বলেই তোফায়েল আহমেদ তাঁর চালককে গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে বলেন। আর পেছন থেকে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা চেঁচিয়ে বলে, ‘থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ স্যার আসার জন্য।’
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম।
এ ঘটনায় পুরো ঢাকা এখন উত্তাল। টানা চতুর্থদিনের মতো আজ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলগুলো থামায় শিক্ষার্থীরা। চালকের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চায়। লাইসেন্স থাকলে গাড়ি ছাড়ে, নয়তো আটকে রাখে, নতুবা পুলিশের কাছে দিয়ে দেয়। উল্টো পথে আসা গাড়িগুলোও তারা ফিরিয়ে দেয়।