পরিবহন ‘ধর্মঘটে’ অচল আশুগঞ্জ বন্দর
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে অচল হয় পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বন্দর ও সেখানকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম।
শ্রমিকরা ট্রাক ও ট্যাংকলরি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আশুগঞ্জ বন্দর থেকে কোনো মালামাল পরিবহন করা যাচ্ছে না। এতে বন্দরে সার, সিমেন্ট, ধান, পাথর, বালুসহ বিভিন্ন মালামাল আটকা পড়েছে।
এদিকে আশুগঞ্জ সার কারখানা থেকে সাত জেলায় কোনো সার পরিবহন হচ্ছে না। মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ থাকায় বন্দরের হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। অনেক শ্রমিককে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
শ্রমিকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
আজ শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইদন মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ঢাকায় বাস দুর্ঘটনায় ছাত্র নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী পরিবহন সেক্টরে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে। এখানে কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে না গিয়ে শ্রমিকরা ইচ্ছেকৃতভাবে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছে।
এই শ্রমিক নেতা আরো বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার দায়ীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে যে আইন তৈরি করতে যাচ্ছে তার প্রতিবাদে আমরা গাড়ি চালাব না। প্রয়োজনে অন্য কাজ করব। কিন্তু গাড়ি চালিয়ে নিজের মৃত্যু ডেকে আনতে যাব না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলে যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সেদিকে সরকার নজর দিচ্ছে না। আবার অতিরিক্ত টাকা দিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স মিলে যাচ্ছে।’
আবুল খায়ের বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে ড্রাইভিং করে যাচ্ছি। আমি লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য গেছি আমাকে বলে নতুন করে আবার ইন্টারভিউ দিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের হয়রানি থেকে ড্রাইভারদের রক্ষা করে ডাইভিং লাইসেন্স সহজে এবং দ্রুত পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে এবং কেউ মারা গেলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান না রেখে শাস্তি কমিয়ে আনতে হবে। কারণ, কোনো ড্রাইভার ইচ্ছে করে কাউকে মেরে ফেলে না।’
পূর্বাঞ্চলীয় কার্গো মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হোসাইন হামদু বলেন, তিনদিন ধরে অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে আশুগঞ্জে কার্গো থেকে মালামাল লোড না হওয়ার কারণে কার্গো মালিকরা লাখ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আশুগঞ্জ বন্দর পরিবহন সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইব্রাহিম মোল্লা জানান, গত তিনদিন ধরে সারা দেশের মতো আশুগঞ্জে অঘোষিত ধর্মঘটে বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে আশুগঞ্জে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন। তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী বাইন হীরা বলেন, আশুগঞ্জে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। আশুগঞ্জে কোথাও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই। তবে আশুগঞ্জ বন্দরে শ্রমিকদের গাড়ি না চালানোর যে সিদ্ধান্ত সে ব্যাপারে আমি খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং গাড়ি না চালানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা থেকে সরে এসে গাড়ি চালাতে শ্রমিকদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, তারা দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে গাড়ি চালাবে।