সাগরদাঁড়িতে ভেঙে পড়েছে বাঁশের সাঁকো, প্রয়োজন নির্মাণ
যশোরের কেশবপুরে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদের ওপর দিয়ে যাতায়াতের একমাত্র সাঁকোটি ভেঙে পড়েছে। গত শুক্রবার এ ঘটনার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দুই পাড়ের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
জানা যায়, ২০১১ সালে যাতায়াতের জন্যে সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির উদ্যোগে দুই পাড়ের মানুষের কাছ থেকে বাঁশ ও অর্থ সংগ্রহ করে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে কপোতাক্ষ নদের দুই পাড়ের শার্শা, সানতলা, কৃষ্ণনগর, পাঁচপাড়া, সেনেরগাতী, সরুলিয়া, ধানদিয়া, জয়নগর এবং এপারের সাগরদাঁড়ি, কোমরপোল, চিংড়া, বগা, নেহালপুর, মহাদেবপুর, রেজাকাটিসহ দুই পাড়ের প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ ওই সাঁকো দিয়ে চলাচল করত।
এদিকে, নদের ওপারের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজারসহ সব কর্মকাণ্ড সাগরদাঁড়ি বাজারে পরিচালনা করে আসছে। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় তাদের এসব কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। যার কারণে ওই বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমেছে ধস।
প্রতিবছর সাগরদাঁড়িতে ২৫ জানুয়ারি থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ সময় লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে সাগরদাঁড়িতে। যার অধিকাংশ মানুষই যাতায়াতের জন্য ওই সাঁকোটিই ব্যবহার করে থাকেন।
জানা যায়, ১৯৯৪ সালে এমনই মধুমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ওই সাঁকোর জায়গায় একটি ব্রিজ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই অনুষ্ঠানে কবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে মধুপল্লী ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দেন। এগুলো বাস্তবায়ন হলেও ব্রিজটি নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ফলে দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে ওই বাঁশের সাঁকোটি। দীর্ঘদিন বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার না হওয়ায় গত শুক্রবার হঠাৎ ভেঙে পড়ে। সেই থেকে জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সুভাষ চন্দ্র দে বলেন, ‘বাঁশ ও অর্থ সংগ্রহ করে প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার কারণে দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এ ছাড়া প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পর্যটকসহ শত শত মানুষের আগমন ঘটে সাগরদাঁড়িতে। এদের অনেকেই কপোতাক্ষ নদে নৌকা ভ্রমণ ও সাঁকো ব্যবহার করত। জরুরি ভিত্তিতে সাঁকোটি নতুন করে নির্মাণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এর জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার, তা আমাদের নেই। সরকারি অর্থ ছাড়া সাঁকোটি নির্মাণ করা সম্ভব নয়।’
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাঁকোটি স্থানীয় জনগণ নির্মাণ করেছিলেন। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষের চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত সাঁকোটি মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’