বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্ত হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের উড়োজাহাজ
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং ড্রিমলাইনার সেভেন-এইট-সেভেন-ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’। উড়োজাহাজটি এই মাসেই বাংলাদেশে আসবে।
আজ শুক্রবার এ বিষয়ে বিমান পরিচালনা বা এভিয়েশন (বিমান চলাচল) বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা হয়। দূরপাল্লার রুটে ব্যবহার করতে না পারলে ড্রিমলাইনার দিয়ে ব্যবসায়িক সাফল্য আসবে না বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর ‘আকাশবীণা’ যাত্রা শুরু করবে। সেদিন সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পরিচালনা করা হবে ফ্লাইট। এ ছাড়া এ বছর আরো একটি ও আগামী বছর দুটি ড্রিমলাইনার বিমান যুক্ত হবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে।
বিমান বহরে থাকা ডিসি ১০ এয়ারক্রাফটগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা সংস্থা বোয়িংয়ের সঙ্গে ২১০ কোটি ডলারে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করে তৎকালীন সরকার। এরই মধ্যে ছয়টি বোয়িং ট্রিপল সেভেন থ্রি হানড্রেড ইআর এবং দুটি সেভেন থ্রি সেভেন এইট হানড্রেড বিমান কেনা হয়েছে। আর বাকি আছে চারটি সেভেন-এইট-সেভেন ড্রিমলাইনার। আর এরই মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, ‘আমরা এই ড্রিমলাইনার থেকে বিমানটিকে রিব্র্যান্ডিং করতে চাই। আমরা আশা করি, এই ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে বিমানের ইমেজ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং বিমান তার সেবার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।’
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম ড্রিমলাইনার দিয়ে দীর্ঘ দূরত্বে ফ্লাইট পরিচালনা করতে না পারা হবে বিমানের ব্যর্থতা।
এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন (বেসামরিক বিমান চলাচল) বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘১০ বছর আগে এটা আমাদের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এই ১০ বছরে কিন্তু যে ধরনের রুট প্ল্যানিং করার দরকার ছিল, সেগুলো কিন্তু করা হয় নাই। উপরন্তু যেসব রুট ছিল, সেসব বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময় ছিল বিমানের ২৯টা ইন্টারন্যাশনাল ডেসটিনেশনে বিমান অপারেট করত। এখন সেটা কমে ১৩টা ১৪টাতে নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে শাকিল মেরাজ বলেন, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ক্যাটাগরি টু থাকার কারণে ফ্লাইট পরিচালনা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা থেকে টরন্টোর ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি থাকলেও যেহেতু আমাকে আমেরিকা হয়ে যেতে হবে, সে কারণে আমাদের টরন্টোর ফ্লাইট এই মুহূর্তে পরিচালনা করতে পারছি না।’
এ প্রসঙ্গে কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন,‘নিউইয়র্কের বেলায় প্রযোজ্য, বাট ইউরোপের বেলায় তো সেটা প্রযোজ্য না। রোমে বা ফ্রাঙ্কফুর্টে বিমান নিয়মিতভাবে ফ্লাইট অপারেশন করেছে। বিমান নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে। বিকজ সেখানে তারা বলছে যে কমার্শিয়ালি ভায়াবল করতে পারছে না। ওসব জায়গায় এখন কিন্তু বাঙালি পপুলেশন অনেক বেড়ে গেছে। রুটগুলো পরিচালনার জন্যে যে ধরনের সক্ষমতা থাকার দরকার বিমানের আমার মনে হয়, সেটা তাদের নাই।’
যুক্তরাজ্যের ফার্নবরোতে এরই মধ্যে ‘আকাশবীণা’ উড়োজাহাজটি প্রদর্শন করা হয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় ঘণ্টায় ৬৫০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে সক্ষম ড্রিমলাইনার। যাত্রীদের আরামদায়ক যাত্রায় আধুনিক সব সুবিধা থাকছে এতে। আছে ফোন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগও।
২০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয়ী ড্রিমলাইনার দিয়ে বাণিজ্যিক সফলতার আশা করা হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট বিমানবহরে যুক্ত করার পাশাপাশি বিমানকে বাড়াতে হবে সক্ষমতা ও সেবার মান।