দক্ষ দুজন সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি : প্রধানমন্ত্রী
সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও সরকারি দলের সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা অনেক দক্ষ দুজন সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি।’
আজ রোববার জাতীয় সংসদে তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মোস্তফা রশিদী সুজার ওপর আনীত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা একজন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক ছিলেন। তিনি একজন প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় অনেক নেতাকর্মীকে অত্যাচার নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের সময় অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ওই সময় দেড়শ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ছিলেন। এখানে অনেক সংসদ সদস্য রয়েছেন যাদের অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এস এম মোস্তফা রশিদী সুজাকে হারিয়ে দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাজুল ইসলাম চৌধুরীর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। তিনি মনে প্রাণে চেয়েছিলেন নির্বাচনটা যাতে হয়। এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে তার আন্তরিকতা ছিল। ওই নির্বাচনটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।’
বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘তাজুল ইসলাম ও মোস্তফা রশিদী সুজা এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন- এটা আমরা ভাবতেও পারিনি। তার পরও প্রকৃতির নিয়ম আমাদের মেনে নিতেই হবে।’
রওশন এরশাদ বলেন, ‘তাজুল ইসলাম একজন ভালো পার্লামেন্টেরিয়ান ছিলেন। তিনি সংসদে থাকলে আমাকে আর চিন্তা করতে হতো না।’
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘মোস্তফা রশিদী সুজা একজন সাহসী মানুষ ছিলেন। তাঁর সাহসী ভূমিকার ফলে খুলনা আওয়ামী লীগ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। ক্লিন হার্ট অপারেশনে তাঁর ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে এজন্য তাঁর অকাল মৃত্যু হয়েছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মোস্তফা রশিদী সুজা দুজনই সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। তাঁরা দুজনই বিনয়ী ও ভালো মানুষ ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘তাজুল ইসলাম একজন চমৎকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ ছিলেন। দুজনই বিনয়ী, সদালাপি মানুষ ছিলেন।’
সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘সুজা জীবনে অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দলের প্রতি আনুগত ছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শিক কর্মী ছিলেন। শুধু রাজনীতিই নয়, তিনি একজন ভালো ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। সত্য ও ন্যায়ের জন্য তিনি কখনো মাথানত করতেন না।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও জামায়াত বিএনপি তাঁর মতো জনপ্রিয় নেতাকে নির্যাতন করে হত্যা করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল।’
ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘তাজুল ইসলাম ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মানুষ। তিনিও ন্যায়ের জন্য সারাজীবন লড়াই করেছেন।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ক্লিন হার্ট অপারেশনের নামে তাঁর ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে এর ফলে তার কিডনি, লিভারসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ অকেজো হয়ে অকাল মৃত্যু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই ক্লিন হার্ট অপারেশনকে বিএনপি-জামায়াতের সময় ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
জাতীয় পার্টির সদস্য এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘তাজুল ইসলাম একজন সংগ্রামী নেতা ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। অনেক দুঃসময়ে তিনি দলের প্রতি আনুগত্য ছিলেন।’ তিনি তাজুল ইসলাম ও সুজার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, সরকারি দলের সদস্য মীর শওকত আলী বাদশা, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, মনিরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, নুরুল ইসলাম ওমর ও ফখরুল ইমাম আলোচনায় অংশ নেন।