ছাত্রদল নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, ‘জিডিও নেয়নি পুলিশ’
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার।
স্বজনদের দাবি, গতকাল শনিবার রাতে মুঠোফোনে কল দিয়ে অপরিচিত কেউ রনিকে তুলে নেওয়ার খবর দেয় পরিবারকে। এরপর থেকেই তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছে না তারা।
এমনকি এ বিষয়ে ফতুল্লা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলেও পুলিশ নেয়নি বলে অভিযোগ রনির পরিবারের। যদিও এ বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ প্রশাসন।
আজ রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য তুলে ধরে রনির পরিবার। তারা জানায়, রনি গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হন। সারাদিন তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিবারের যোগাযোগ হয়। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন ফোন দিয়ে তাঁকে তুলে নেওয়ার তথ্য জানান।
এ ব্যাপারে ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান রনির ছোট ভাই মহিবুর রহমান রানা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গতকাল যখন আমি আমার ভাইয়ের খোঁজ নেওয়ার জন্য ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। সাড়ে ১০টার দিকে। তখন আমার ভাইকে ফোনে পাইনি। কিন্তু মোবাইল খোলা ছিল। এরপর একটা অপরিচিত নম্বর থেকে আমাদের ফোন করে বলা হইছে যে, আমার ভাই মশিউর রহমান রনিকে কিছুক্ষণ আগে একটা কালো গাড়িতে করে ডিবি পুলিশের পরিচয়ধারী কিছু লোক ধরে নিয়ে গেছে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করছি, পরিচয় জানার চেষ্টা করছি। সে তার পরিচয় গোপন রাখছে। সে বলছে, আপনারা খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হন যে, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হইছে। এরপর থেকে রনির মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়।’
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনির পরিবার। ছবি : এনটিভি
‘এরপর আমি আমার পারিবারিক যারা আত্মীয়স্বজন আছে তাদের কাছে খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু তার (রনির) কোনো খোঁজ-খবর আমরা পাই নাই। আমরা ফতুল্লা থানায় খবর নিয়েছি, ডিবি অফিসে খবর নিয়েছি, এসপি অফিসে গিয়েছি, তারপর আপনার মিন্টু রোড ডিবি অফিসে খবর নিয়েছি। কোথাও থেকে আমাদের আশ্বস্ত করার মতো কোনো খবর দেওয়া হয় নাই।’
রনির ছোট ভাই আরো বলেন, ‘তো এই মুহূর্তে আমাদের একটাই দাবি পরিবারের পক্ষ থেকে, আমার ভাই মশিউর রহমান রনি, সে রাজনীতি করে, ছাত্রদলের সভাপতি। তাঁর নামে যদি মামলা থাকে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হোক। আর তার নামে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে তাহলে ফ্যামিলির কাছে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমাদের শুধু এতটুকুই দাবি।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘যেই কারণেই হোক। ওইটা একটা কারণ বলছে। প্রায় আজকে ১৮ ঘণ্টার মতো হইয়া গেল। এখন পর্যন্ত আমরা তাঁর কোনো হদিস পাচ্ছি না।’
জেলা বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা সারাদিন প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাই নাই। আমরা আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন যে, মশিউর রহমান রনিকে অপহরণ করেছে বা গুম করেছে বা তুলে নিয়ে গেছে, দ্রুত তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হোক। আমরা সেই জিনিসটাই চাচ্ছি সরকারের কাছে, যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা থাকে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হোক, আর না থাকলে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
সাখাওয়াত হোসেন খান অভিযোগ করে বলেন, ‘আজ বিকেল ৩টায় তাঁরা নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে অপহরণের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সুপার তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। এর আগে ফতুল্লা থানা জিডির লিখিত গ্রহণ করেনি। ছাত্রদল সভাপতি রনিকে উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহযোগিতাই পাচ্ছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনির স্বজনদের আহাজারি। ছবি : এনটিভি
তবে এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি সত্য নয়, সঠিক নয়। এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ আসেনি। আমি প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত আমার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলি। সময় দেই। আজকেও তাই হয়েছে। মানুষের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে আমি একটা খাতাও মেইনটেন করি। আজকেও সেটা করা হয়েছে। আমার কাছে এই ব্যাপার নিয়ে কেউ আসেননি।’
রনির পরিবার ফতুল্লা থানায় জিডি করতে গেলেও তা নেয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার প্রতিবেদককে বলেন, ‘এটা আমি প্রথম আপনার কাছ থেকে শুনেছি। এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’
রনির মা, বাবা ও বড় বোন হজ পালনের জণ্য সৌদি আরব গেছেন। তাই, আজকের সংবাদ সম্মেলনে রনির দুই ভাই, তিন খালা ও পরিবারের অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।