রোহিঙ্গাদের কেরোসিন ও স্টোভ দিল ভারত
বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জ্বালানি সংকট নিরসনের জন্য ১০ লাখ লিটার কেরোসিন তেল ও ২০ হাজার স্টোভ দিয়েছে ভারত। তৃতীয় পর্যায়ের ত্রাণ সহযোগিতা হিসেবে আজ সোমবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ওই জ্বালানি সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আজ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে একটি করে স্টোভ ও ১০ লিটার করে কেরোসিন তেল দিয়েছেন। পরিবারগুলোকে আরো চার মাস ১০ লিটার করে কেরোসিন তেল দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে নয়াদিল্লির বিদেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বাংলাদেশ, মিয়ানমার) বিক্রম দোরাইস্বামীও উপস্থিত ছিলেন।
কেরোসিন ও স্টোভ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়তা করছে ভারত। বাংলাদেশ সরকারের চাওয়াগুলো আমাদের সাধ্যমতো পূরণ করতে পারলে আমি খুবই খুশি হব। অবশ্যই নীতি নির্ধারকদের দ্বারা কিছু বিষয় ঠিক করা হবে, কিন্তু সব মিলিয়ে এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া এবং এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারলে আমরা খুশি হব।’
ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জোর দিয়ে কথা বলেছেন। কফি আনান কমিশনের পরামর্শগুলো পূরণ করতে রাখাইনের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সাহায্য করছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে কাজ শুরু করেছি। অর্থাৎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব আমরা নিচ্ছি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওইসব জায়গায় গেছেন এবং আমাদের চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি, এ ব্যাপারে আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখব।’
আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জ্বালানি সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি : এনটিভি
এরই মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ভারতের সহায়তায় ২৫০টি ঘর নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া মিয়ানমারের মংডু জেলার ক্যিং সং গ্রামে আরো ৫০টি বাড়ির ভিত্তির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান ভারতের হাইকমিশনার।
শ্রিংলা জানান, রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার পর আজ তৃতীয় দফা হিসেবে কেরোসিন ও স্টোভ (চুলা) বিতরণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জ্বালানির কথা বিবেচনা করে আজকে কেরোসিন ও স্টোভ বিতরণ করা হয়েছে। আজ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে একটি করে স্টোভ ও ১০ লিটার করে কেরোসিন বিতরণ করা হয়েছে।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আপনারা জানেন রোহিঙ্গারা অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশে এসেছে। এখানে ১১ লক্ষ লোকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, স্যানিটেশন এবং খাবার তৈরির জ্বালানি তৈরির ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়। দেশের জনগণের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা বিভিন্ন সংকটের সফল সমাধান করতে পেরেছি। বিশেষ করে আমাদের ভারতীয় হাইকমিশনার সাহেব উনাকে যখন আমি রিকোয়েস্ট করলাম যে এই জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংকট হলো জ্বালানি সংকট। এখানে আগে গাছপালা ছিল, সব উজাড় হয়ে গেছে। ১০ লক্ষ লোকের জ্বালানি সংগ্রহ করা কঠিন কাজ। আগে গাছ ছিল, গাছ খেয়ে ফেলেছে। গোড়া খেয়ে ফেলেছে। কোনো কিছু নেই। শুধু দেখবেন যে, মাটির মাথাটা দেখা যায়, ন্যাড়া মাথার মতো। উনাকে অনুরোধ করার পর সাথে সাথে তিনি আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেন এবং উনি আজকে ২০ হাজার পরিবারের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
এর আগে সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দর হয়ে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছায় ভারতীয় ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখের মতো। এই বিশাল সংকটের মধ্যে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠালেও কোনো সময় প্রতিনিধি পাঠায়নি ভারত।
এ সময় ত্রাণসচিব মো. শাহ কামাল, কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি হাফিজ আহমেদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আজ ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ‘অপারেশন ইনসানিয়াৎ’ এর অধীনে ভারত সরকার মানবিক সহায়তার প্রথম পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৮১ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী প্রদান করে। এসব ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল প্রায় ৩ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য চাল, ডাল, চিনি, লবণ, রান্নার তেল, চা, নুডলস, বিস্কুট, মশারি ইত্যাদি।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৮ সালের মে মাসে, চট্টগ্রামে ৩৭৩ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করা হয়। যার মধ্যে ছিল ১০৪ মেট্রিক টন গুড়ো দুধ, ১০২ মেট্রিক টন শুঁটকি, ৬১ মেট্রিক টন শিশুখাদ্য এবং বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য ৫০ হাজার রেইনকোট ও ৫০ হাজার জোড়া গামবুট।
ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠবন্ধন রক্ষার্থে ভারত সবসময় বাংলাদেশের যেকোনো সংকটে নির্দ্বিধায় ও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিয়েছে। মিয়ানমারের বাস্তুহারা মানুষের মানবিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে সহায়তা করতে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ।