‘ডাক্তার কইছে, রেহেনার খুলি কাইট্যা গেছে’
‘যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় নেশাগ্রস্ত স্বামীর দায়ের আঘাতে’ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার গৃহবধূ রেহেনা আক্তার (২৭) গুরুতর জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আঘাতের কারণে তিনি মানসিকভাবেও কিছুটা ভারসাম্য হারিয়েছেন। তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল থেকে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় রেহেনার স্বামী উপজেলার চূড়খাই নামাপাড়া গ্রামের স্বপন মিয়া (৩০), তাঁর মা শাহনাজ খাতুন, সেলিম মিয়া ও আবদুল হালিমকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। স্বপন মিয়া সৌদিপ্রবাসী বাদল মিয়ার ছেলে। পুলিশ শাহনাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। দুদিন পর তিনি জামিন পান। বাকি আসামিরা পলাতক।
মামলার বাদী রেহেনার বাবা গৌরীপুর উপজেলার কাশিয়ার চর ফরায়জীপাড়া গ্রামের দিনমজুর ইসলাম মিয়া গতকাল মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ডাক্তাররা কইছে, রেহানার মাথার খুলি কাইট্যা গেছে। অপারেশন করে সাত/আট দিন চিকিৎসার পরে রেহেনারে ছুটি দিছে। তিন মাস পর ফের ডাক্তারের কাছে যাইতে কইছে।’
‘রেহেনা ওখন পাগলের মতো। ক্ষণে ক্ষণে আবোলতাবোল কয়। আমি গরিব মানুষ, মেয়ের চিকিৎসা কীবায় করাব, সামর্থ্য নাই,’ যোগ করেন রেহেনার বাবা।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আট বছর আগে স্বপন মিয়ার সঙ্গে রেহেনার বিয়ে হয়। গবির পরিবারের সন্তান রেহেনা দেখতে সুন্দর ছিলেন বলেই সৌদিপ্রবাসী বাদল মিয়া তাঁকে ছেলের বউ করে ঘরে আনেন। কিন্তু স্বপন মাদকাসক্ত, সেটি পরিবার গোপন রাখে। স্বপন আর রেহেনার সংসারে দুই সন্তান আছে। তারা হলো আইমুন (৪) ও আরিশা (২)।
মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, নেশাগ্রস্ত স্বপন নানা সময়ে রেহেনার ওপর নির্যাতন করতেন। কিন্তু রেহেনা দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করে যাচ্ছিলেন। সম্প্রতি স্বপন বিদেশ যাওয়ার নাম করে রেহেনার বাবার কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পরিবার সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হয়।
এর পর থেকে রেহেনার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে স্বপন মিয়া ক্ষেপে গিয়ে রেহেনার মাথায় দা দিয়ে আঘাত করেন। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল সাহা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ঘটনার পরদিন, অর্থাৎ ৮ সেপ্টেম্বর রেহেনার বাবা চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। যেদিন মামলা করেন, সেদিন রাতেই রেহেনার শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদিন পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। বাকি আসামিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সচেষ্ট আছে।
এসআই আরো জানান, মেয়েটির পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। স্বামীর পরিবার বিত্তবান। পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হলেও মামলার প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, স্বপন মিয়া বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত থাকতে পারেন। রেহেনা অসুস্থ থাকায় তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া যাচ্ছে না। সুস্থ হলে তাঁর সাক্ষ্য নিয়ে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।