সত্যও মেলেনি ধরা, তদন্ত প্রতিবেদন ইসিতে জমা
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অভিযোগ ওঠা ৫৮টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৭টি কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি। এ নিয়ে সম্প্রতি তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে ইসির বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২৩টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগে ভোট গ্রহণ চলাকালে দুপুরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার, ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী ওবাইদুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) মেয়রপ্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ।
এরপর ৫৮টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নামে নির্বাচন কমিশন। গঠন করে তদন্ত কমিটি। কমিটির সদস্যরা ৫৮টি কেন্দ্রের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁরা ১৭টি ভোট কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ লিখিত আকারে প্রমাণ পেয়েছে। বাকি ৪১টি কেন্দ্রের অনিয়মের অভিযোগ থাকার পরেও তার কোনো প্রমাণ পায়নি কমিটি।
ইসি সূত্র আরো জানায়, তদন্তে নামার পরে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খুব বেশি সহযোগিতা করেননি। ভয়ে বা যে কারণেই হোক কোথাও কোথাও সত্য প্রকাশ করেননি তাঁরা। এমনকি অনিয়মের পর্যাপ্ত তথ্য নিয়ে নির্বাচনের দিন নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করেছিলেন তার ভেতরেও সাতটি কেন্দ্রে কোনো ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান ও ইসির যুগ্ম সচিব খোন্দকার মিজানুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি (গত ১৮ সেপ্টেম্বর) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। মোট ৫৮টি কেন্দ্রের অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে ১৭টি কেন্দ্রের অভিযোগের লিখিত প্রমাণ আমরা পেয়েছি। বাকি ৪১ টি কেন্দ্রের অভিযোগের প্রমাণ আমরা পাইনি। অনেকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আমরা যেভাবে তদন্তে পেয়েছি, যা পেয়েছি সব লিখিত আকারে জমা দিয়েছি।’
তদন্ত কমিটির প্রধান আরো বলেন, ‘এছাড়াও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) যে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করেছিলেন সেই ১৫ টি কেন্দ্রের মধ্যেও অর্ধেক কেন্দ্রের অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাইনি আমরা!’
ইসির একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নির্বাচনী কর্মকর্তারা যদি আপনার সামনে মুখ না খোলে আপনি কী করবেন? আপনার কাছে তথ্য আছে কিন্তু কাউকে মুখ দিয়ে বলাতে পারছেন না। আপনার কিছুই করার নেই। যা পাবেন তাই লিখতে হবে। কমিশন ১৫টি কেন্দ্র স্থগিত করল অথচ সেই সব কেন্দ্রের ভেতরেও সাতটি কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমাণ করা গেল না। তাহলে বুঝেন অবস্থা! কমিটি মাঠে যা যা পেয়েছে ঠিক তাই কমিশনে লিখিত আকারে জানিয়েছে।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মোট ১৭টি কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আইনের আওতায় নিয়ে আসা হলে ওই ১৭টি কেন্দ্রের কর্মকর্তাদেরই নিয়ে আসা হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর বাকিটা কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
ইসির স্থগিত করা ১৫টি কেন্দ্রের ভেতরেও সাতটি কেন্দ্রের অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। তার মানে কি উপযুক্ত তথ্য না পেয়েই কেন্দ্রগুলো স্থগিত করা হয়েছিল-এমন প্রশ্নে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘তারা যে ভুল তথ্য পাঠিয়েছেন, বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। আমাদের রিটার্নিং অফিসার এবং পর্যবেক্ষকরা ওই অনিয়মের তথ্য কমিশনে পাঠিয়েছিল লিখিত আকারে। তবে তদন্ত কমিটি কিছু কেন্দ্রের অভিযোগের সত্যতা পায়নি। তদন্ত কমিটির কাজই হলো লিখিত আকারে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা।’
তবে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের দিন যে ২৯টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ লিখিত আকারে দিয়েছিলাম তা আমরা নিশ্চিত হয়েই দিয়েছিলাম। আমাদের দেওয়া তালিকাতে কোনো ভুল তথ্য ছিল না। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কি আছে, না আছে আমি জানি না।’