বর্জনের উপনির্বাচনে জয় হলো নৌকার
কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদানসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে আজ বুধবার কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন বর্জন করেন তিন প্রার্থীর মধ্যে দুজনই। সেই বর্জনের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আজিজুল হক ভূঞা মোতাহার নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪৮ হাজার ৬৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফা পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩৯ ভোট এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ একেএস জামান সম্রাট পেয়েছেন ৮ হাজার ২১৮ভোট।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন এই ফলাফল ঘোষণা করেন।
এর আগে আজ দুপুর ২টার দিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফা তাড়াইল বাজারে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চললেও এরপর থেকেই কেন্দ্র দখল শুরু হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়ে একের পর এক কেন্দ্র দখল করে ব্যাপকভাবে জাল ভোট প্রদান করেছে। একপর্যায়ে ৪২ কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫টি কেন্দ্রই দখলে চলে যায় এবং জাল ভোটের উৎসব চলে। এমনকি আমার বাড়ি সংলগ্ন বেলংকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রও দখল হয়ে যায়। এর ফলে নিরর্থক হয়ে পড়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো অর্থ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবদুল হাকিম রানা ও শরীফুল মাহমুদ শোয়েব, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন জুয়েলসহ দলীয় কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি দলীয় প্রার্থী ও তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফা দুপুরে তাড়াইল বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। ছবি : এনটিভি
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ একেএস জামান সম্রাট দুপুর আড়াইটার দিকে তাড়াইল হাইস্কুল গেট সংলগ্ন নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থীর লোকজন প্রায় সব কেন্দ্রই দখল করে নেয়। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আলহাজ মো. আজিজুল হক ভূঞা মোতাহার নিজেই সরকারি মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, পাইচ্চা পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোষপাড়া সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয় ও আড়াইপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৬টি কেন্দ্রে দখল করে জাল ভোট প্রদানে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া তাঁর সমর্থক তালজাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান তাঁর ইউনিয়নের সব কটি কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেন। কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট চলাকালে প্রশাসন, নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করে। এ কারণে আমি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে অনিয়মের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে কোনো প্রার্থী আমার কাছে কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি।
এদিকে নির্বাচন চলাকালে দুপুর ১টার দিকে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের হাছলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে দামিহা ইউপির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়াসহ সাতজন আহত হয়।
গত ১৮ জুলাই তাড়াইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন ভূয়া কাঞ্চন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। এ কারণে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হওয়ায় এ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাচনের ৪২টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৪২৭।