নওগাঁয় ৯৫০ চালকলে উৎপাদন বন্ধ
নওগাঁ জেলার প্রায় ৯৫০টি চালকলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে উৎপাদিত পণ্যের বাজারদর হারিয়েছেন ওই চালকলের মালিকরা। ফলে বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন চালকলের মালিকরা। উৎপাদন বন্ধ থাকায় ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ঋণের বোঝা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপ আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছে। বেলা ১১টায় নওগাঁ শহরের আলুপট্টি এলাকায় চালকল মালিক গ্রুপের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নওগাঁ জেলার চালকল শিল্পের বিদ্যমান পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি এ শিল্পকে বাঁচাতে চালের আমদানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা এবং সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংকঋণে সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছে জেলা চালকল মালিক গ্রুপ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার, সাবেক সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মোত্তালেব হোসেন ও আব্দুল জব্বার, অর্থ সম্পাদক মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি হয়। সে সময় চাল আমদানির ওপর আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করে চাল আমদানি করে খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করা হয়। কিন্তু বিগত ইরি-বোরো ও আউশ মৌসুমে দেশে বিপুল ধানের উৎপাদন হওয়ায় দেশে পর্যাপ্ত ধান-চালের মজুদ গড়ে ওঠেছে। কিন্তু এখনো প্রতিবেশী দেশ থেকে চালের আমদানি অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় দেশে উৎপাদিত চালের বাজার মূল্য প্রতিনিয়ত কমছে। এতে কৃষকের পাশাপাশি চালকলের মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রফিকুল আরো বলেন, বাজারে বর্তমানে দেশীয় চালের ক্রেতা নেই বললেই চলে। চালকল গুদামে বিপুল চাল মজুদ থাকলেও ক্রেতা না থাকায় চাল বিক্রি করতে পারছে মালিকরা। এ অবস্থায় জেলার প্রায় ৯৫০টি চালকলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এই মূহূর্তে চালের আমদানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা না হলে কৃষিভিত্তিক এই শিল্প পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানার জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হওয়ার কথা। দুই দফা সময় বাড়িয়েও ব্যাংকগুলো সরকারের গৃহীত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে না। ব্যাংকগুলো আগের মতো ব্যাংকঋণে সুদের হার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বহাল রেখেছে। কমবেশি সব চালকলের মালিকই ব্যাংকে জামানত রেখে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। চাল আমদানির কারণে চালের মূল্য কমে যাওয়ায় চালকলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরে চাল আমদানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাণিজ্যমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন জেলা চাউল কল মালিক গ্রুপের প্রতিনিধিরা। নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, আমদানি বন্ধের এই সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে ৯৫০টি চালকল বন্ধ— এটা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ বর্তমানে নিবন্ধিত চালকলের মধ্যে অনেক মালিক রয়েছেন যাঁরা সিজনাল ব্যবসা করেন। আবার অনেক মালিক রয়েছে যারা শুধু সরকারি গুদামে চাল দেওয়ার জন্য উৎপাদন করে। অটোমেটিক চালকল ছাড়া অধিকাংশ হাস্কিং মিল এভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট চালকলের সংখ্যা এক হাজার ৮০০টি। ব্যাংকের ঋণের দায়ে এরই মধ্যে ৬০০ মিল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। আরো ৩৫০ মিল বন্ধের পথে। অবিলম্বে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ এবং ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে না আনলে খাদ্য উদ্বৃত্ত নওগাঁ জেলায় গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। এ সব সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নওগাঁর চাল ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নেতারা।