‘দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হবে বরিশালে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলে নির্মাণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি রূপপুরে। আমরা ইতিমধ্যে বরিশাল বিভাগের কয়েকটি দ্বীপ সার্ভে করেছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে বরিশালের এই দ্বীপগুলোর একটিকে বেছে নিয়ে ভবিষ্যতে আরেকটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা করব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (বিএসএমসি) সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘বরিশালসহ সারা দেশে তাঁর সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। ভোলা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বরিশালে যেন গ্যাস আসে তার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা আমরা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। এই অঞ্চলে কিছু শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা একান্তভাবেই প্রয়োজন এবং আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ সময় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন। আর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তাঁর সরকারে গবেষণায় প্রণোদনা দানের ফলে দেশীয় বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলমগ্ন ধান উৎপাদনেরও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, আর আমাদের গোপালগঞ্জের ধাপের ওপর করা সবজির চাষ বা ফ্লোটিং চাষ পদ্ধতি আমরা এ অঞ্চলসহ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এক সময় শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বরিশালে যেন আবার সুদিনে ফিরতে পারে, সেজন্যও আমরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জনগণের দোড়গোড়ায় সব ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের সাথে সাথে তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা-দীক্ষা সব দিক থেকে মানুষ যেন আরো উন্নত হয়, সমৃদ্ধশালী হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং যার উন্নয়নের ছোঁয়াটা দেশের মানুষ পাচ্ছে। জিনিসপত্রের দামও আমরা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, তেমনি মানুষের মাথাপিছু আয়ও আমরা বৃদ্ধি করেছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘নদীগুলো ড্রেজিং করে নৌপথগুলোকে আমরা পুনরায় চালু করছি। তার ফলে অল্প খরছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও আরো সম্প্রসারণ হতে পারবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’ বরিশালসহ পুরো দক্ষিণ জনপদটিই তাঁর সরকারের শাসনামলে আর অবহেলিত নয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি পায়রা সমুদ্র বন্দরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে ওটা গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত হবে এবং ইতিমধ্যেই সেখানে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।’
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এক হাজার বেডের করাসহ সরকারের অন্যান্য পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি আমাদের একটা পরিকল্পনা রয়েছে- প্রত্যেক বিভাগে আমরা একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করব। ইতিমধ্যে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করেছি। এ অঞ্চলেও করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে, একটি কথা আমি স্পষ্ট বলে দেই- কোনো মেডিকেল কলেজকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করব না। বিশ্ববিদ্যালয় হবে সম্পূর্ণ আলাদা। আর বিশ্ববিদ্যালয় হবে গবেষণামূলক, বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে পোস্ট গ্রাজুয়েশন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেবল পোস্ট গ্রাজুয়েশন এবং গবেষণা থাকবে এবং সেখানে শুধু নার্সিং ট্রেনিয়ের ব্যবস্থাটা থাকবে, এটা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে করব। সব মেডিকেল কলেজ সেখানকার নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এফিলিয়েটেড থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশের মানুষ যেন সেবা পায় সেজন্য সরকার ইতিমধ্যেই ডাক্তার এবং নার্স একের পর এক নিয়োগ দিয়ে চললেও দুঃখজনক যে আমাদের উপজেলাগুলোতে ডাক্তার থাকছে না।’ তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোতে তাঁর সরকার শয্যা এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে দিলেও বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় অপারেশন থিয়েটার পড়ে আছে কিন্তু অপারেশনের জন্য, সার্জন, এনেসথেসিস্ট, নার্স কেউ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিষ্ঠান করে যাব আর সেগুলো অবহেলিত থাকবে, এটা কিন্তু হতে পারে না। মানুষের সেবা দেওয়াটা প্রত্যেকের দায়িত্ব আমি আশা করি এই সেবাটা প্রত্যেক মানুষই পাবে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রত্যক উপজেলায় বহুতল ভবন নির্মাণে তাঁর সরকারের পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এই সব ভবনে তাঁরা (চিকিৎসকবৃন্দ) ভাড়ায় আবাসন সুবিধা লাভ করতে পারবেন।’
পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর দয়াগঞ্জ ও ধলপুর সিটি কলোনিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নির্মিত চারটি বহুতল আবাসিক ভবনে ৩৪৫টি আবাসিক ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করেন।
এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দোকার মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ওপর একটি ‘প্রেজেন্টেশন’ উপস্থাপন করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলালসহ স্থানীয় উপকারভোগী জনগণ এ সময় দয়াগঞ্জ প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে।
সরকার সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসনের জন্য ২০১৩ সালে দয়াগঞ্জে পাঁচটি, ধলপুরে পাঁচটি এবং সূত্রাপুরে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৯০ কোটি টাকা। সেই প্রকল্পের আওতায় আজকে চারটি ভবনের উদ্বোধন হলো এবং আরো আটটি নির্মাণ কাজ এখনো চলছে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ছেলেমেয়েরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মতো দক্ষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে।’
দৈনিক পরিষ্কার পরিচ্ছতা অভিযানের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির সন্নিবেশন ঘটাতে প্রধানমন্ত্রী এ সময় সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগগুলোর প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনকে ঘর দেওয়ায় তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যাদের ঘর-বাড়ি নেই তাদের আমরা ঘরবাড়ি করে দেব এবং দিচ্ছি। আর যারা আমাদের চারপাশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছে তাদের জীবন ধারনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশের নিশ্চয়তা বিধান করাও সরকারের কর্তব্য।’