সুবর্ণা নদী হত্যা : প্রধান আসামি জামিনে, সাবেক স্বামী অধরা
পাবনার সাংবাদিক সুর্বণা নদী হত্যা মামলার প্রধান আসামি শিল্পপতি আবুল হোসেন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি সুবর্ণা নদীর সাবেক শ্বশুর। আবুল হোসেন পাবনার শিমলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ইড্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাবনা কারাগার থেকে আবুল হোসেন মুক্তি পান। এদিকে হত্যাকাণ্ডের দেড় মাস পার হলেও ধরা পড়েননি এজাহারভুক্ত আসামি সুবর্ণা নদীর সাবেক স্বামী রাজিবুল ইসলাম রাজিব।
গত ২৮ আগস্ট রাতে অনলাইন পোর্টাল ‘দৈনিক জাগ্রত বাংলা’র সম্পাদক ও প্রকাশক এবং আনন্দ টিভির পাবনা জেলা প্রতিনিধি সুবর্ণা নদী ওরফে শম্পাকে পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লার ভাড়া বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার দিনই পুলিশ সুবর্ণা নদীর সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গত ১৫ সেপ্টেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি সামসুজ্জামান মিলনকে ঢাকার আরমানিটোলা থেকে গ্রেপ্তার করে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ দেড় মাস পার হয়ে গেলেও পুলিশ এই হত্যার কারণ এবং কারা প্রকৃত হত্যাকারী বা মদদদাতা, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি। তবে এই হত্যাকাণ্ডে সুবর্ণা নদীর সাবেক শ্বশুরালয় আবুল হোসেনের পরিবারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে কাজ করছে পুলিশ।
সুবর্ণা নদীর মা মর্জিনা খাতুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাজিবের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকেই প্রাণহানির শংকায় ভুগতেন নদী। গত বছর নিজের এবং তাঁর সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন। তিনি ওই সময় বলেছিলেন, তাঁর শ্বশুর আবুল হোসেন অনেক টাকার মালিক, তিনি লোক দিয়ে যেকোনো সময় তাঁকে হত্যা বা গুম করাতে পারেন। তা ছাড়া স্বামী এবং শ্বশুরের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুলে তাঁদের বিচারের দাবিতে প্রায়ই নিজের ফেসবুকে লিখতেন।’
নিহত সুবর্ণা নদীর বোন চম্পা এনটিভি অনলাইনকে জানান, পাবনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে রাজিব হোসেনের সঙ্গে ২০১৬ সালের ৬ জুন সুবর্ণার বিয়ে হয়। বিয়ের বছরখানেক পর তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ছাড়াছাড়ির পর পরই সুবর্ণা নদী পাবনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাজিবের বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে একটির মামলা দায়ের করেন। মামলায় রাজিব, আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। সুবর্না নদী যেদিন হত্যার শিকার হন সেদিন ওই মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল। আদালতে সকালে নদী সাক্ষ্যও দেন।
নিহত নদীর বোন চম্পা আরো দাবি করেন, আমার বোন সাংবাদিক হলেও সংবাদ প্রকাশের কারণে তাঁকে মরতে হয়নি। তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে আবুল হোসেনের ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করার কারণে।
দীর্ঘ দেড় মাস পার হলেও হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটিত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাবনা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক অরবিন্দ সরকার বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত তিনজনের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান আসামি আবুল হোসেন উচ্চ আদালতের আদেশে জামিন পেয়েছেন। রাজিবকে ধরতে পাবনা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।