শুধু বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে কোনো ‘চক্রান্তে’ যাবে না বিকল্পধারা
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাঁরা থাকতে চান। তবে, যে প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
অন্যদিকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর আবদুল মান্নান (অব.) বলেছেন, ‘আজকের পর থেকে জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির সাথে কোনো বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ বিকল্পধারা দিবে না। স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গ ত্যাগ করে জাতীয় সংসদে ভারসাম্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা বিএনপির পক্ষ থেকে না আসা পর্যন্ত শুধু বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বিকল্পধারা দেশে কোনো চক্রান্তের সাথে সম্পৃক্ত হবে না।’
আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর বারিধারার বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির দুই নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবদুল মান্নান বলেন, আজকের দুঃশাসনের হাত থেকে জাতির মুক্তির জন্য আমরা অনেক দিন থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি। প্রথম দফায় আমরা জেএসডি এবং নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করি। পরে ড. কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি ও লক্ষ্য নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের একটি প্রক্রিয়া শুরু করি। এ বিষয়ে বিকল্পধারা সবসময়েই আন্তরিক ছিল। জনাব মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ার আপত্তি থাকলেও আমরা তাঁর পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করি এবং উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে বৃহত্তর ঐক্য গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করি। পরবর্তীতে বিএনপির সাথে ঐক্য প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিকল্পধারা সব সময়ই সচেষ্ট ছিল। অতীতের সকল অত্যাচার নির্যাতনকে বিবেচনায় না এনে খোলা মন নিয়ে বিকল্পধারা এই ঐক্য প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সচেষ্ট ছিল। শুধু নীতির প্রশ্নে দুটো প্রধান দাবিকে সামনে রেখে বিকল্পধারা অনঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। কেবল বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অথবা যুক্তফ্রন্টের চেয়রম্যান হিসেবেই নয় এমন কি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে এবং বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার আলোকে সাবেক প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের দলকে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত থেকে রক্ষার বিষয়টিকে মাথায় রেখে এবং সর্বোপরি তরুণ প্রজন্মসহ আপামর জনসাধারণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বিকল্পধারা অনঢ় ভূমিকা পালন করে। একই সাথে বিকল্পধারা জাতীয় সংসদে কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে স্বেচ্ছাচারী সরকারের হাত থেকে রক্ষার জন্য ভারসাম্যের বিষয়টিকে আলোচনায় নিয়ে আসে। বিকল্পধারা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে আজকের দুঃশাসনের হাত থেকে জাতির মুক্তি এবং একটি গণতান্ত্রিক অগ্রগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। কোনো একটি নির্দিষ্ট দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানোর জন্য বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা হলে জনগণের স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশার সাথে প্রতারণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল ১২ অক্টোবর আ স ম আবদুর রবের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু ড. কামাল হোসেনের পক্ষে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় বৈঠকে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরী বিকেল সাড়ে ৩টায় ড. কামাল হোসেনের বাসায় পৌঁছান। কিন্তু ড. কামাল তখন বাড়িতে ছিলেন না এবং তাঁর বাড়ির দরজা খোলার জন্য কোনো লোকও ছিল না। এটা শিষ্টাচারের কোন পর্যায়ে পড়ে তা সহজেই অনুমেয়। আজ দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে, ১. জনগণকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে পরোক্ষভাবে একটি ঐক্য গড়ে তোলার অপচেষ্টা এবং ২. নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে বিকল্পধারার অনঢ় অবস্থানকে বিবেচনায় রেখে একটি চক্রের জাতির প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করা। কারা এই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে চায় এটা আজ জাতির সামনে পরিস্কার।
সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধ স্বীকার করে না, তাদের বাদ দিতে হবে। আর দুই নাম্বার, ভারসাম্যের জন্যে আপনার ১৫০ আসনের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দিস ইজ সেক্রিফাইস, ইউ হ্যাভ টু মেক সেক্রিফাইস ফর দ্যা ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্রের জন্য এই ত্যাগটুকু স্বীকার করতে হবে)। সেক্রিফাইস ইউ উইল মেক ফর দ্যা ফিউচার অব দ্যা কান্ট্রি (দেশের ভবিষ্যতের জন্য এই ত্যাগ)। একটা স্বেচ্ছাচারী সরকার যেন, ভবিষ্যতে আর না আসে, একটি দলের প্রাধান্যে সমস্ত দেশ যেনো লুটপাট না হয়ে যায়। সেজন্য একটু অনুরোধ, একটু ত্যাগ স্বীকার করুন। দ্যাটস অল (এটাই)।’