আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অপরদিকে উপস্থিত কর্মকর্তারা তাদের নির্বাচনী বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সমস্যা শুনে সেসব বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত সভা হয়। সেখানে ১০ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও ৬৪ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অংশ নেন। ওই সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা এসব কথা নিশ্চিত করেছেন।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, সভায় ১০ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও ২০ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বক্তব্য দেন। তাঁরা নির্বাচনের সামগ্রিক প্রস্তুতি, নির্বাচনের সময় নির্বাচনী চাহিদা ও বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটার তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে বলা হয়, যাতে কোনো ধরনের ত্রুটি না থাকে। ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতের বিষয়টি আলোচনায় উঠলে কমিশন কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে সব সমস্যা চিহ্নিত করতে বলে। পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোর সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হয়।

সূত্র আরো জানায়, একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বক্তব্য দেওয়ার সময় পার্বত্য অঞ্চলের কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান। আরো একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর জেলার নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করেন। একজন চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা খারাপ বলে উল্লেখ করেন। তখন তাঁদের আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার সবই করা হবে। নিরাপত্তাহীনতা বোধ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। এসব নিয়ে কোনো চিন্তা না করতেও পরামর্শ দেন সিইসি। এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যা যা করণীয় সব কিছুর জন্য তাঁদের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাগিদ দেন তিনি।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভার শুরুতেই ভোটার তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগ থেকে হালনাগাদ ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তারা চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই করে সিডির সঠিকতা সম্পর্কে প্রত্যয়ন পাঠাবেন। মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের দিতে ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত কার্যক্রম নির্বাচনের সময়সূচি জারির আগেই সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়াও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত এবং প্রশিক্ষণের আয়োজনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। তখন ইসির পক্ষ থেকে এসব নিয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, এছাড়াও নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, বিতরণ ও বাজেট প্রণয়ন বিষয়ে কর্মকর্তাদের বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য ১০ ধরনের নির্বাচনী দ্রব্যাদির মধ্যে গানি ব্যাগ, হেসিয়ান ব্যাগ, মার্কিং সিল, অফিসিয়াল সিল, ব্রাশ ও অমোচনীয় কালির কলম এরইমধ্যে পাওয়া গেছে। স্ট্যাম্প-প্যাড, ব্যালট বক্সের লক ও লালগালা চলতি মাসের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে। নতুন অন্তর্ভুক্ত মালামাল (ক্যালকুলেটর, চার্জার লাইট ও পিনসহ স্ট্যাপলার মেশিন) সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়াও সবশেষে নির্বাচনের বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে আলোচনা হয়। সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের বলা হয়, নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দ থেকে ব্যয় প্রক্কলন, বিস্তারিত দফা- উপদফাওয়ারি ব্যয় বিভাজন ও হার নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

সভায় সিইসি কে এম নুরুল হুদা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় সমগ্র জাতি একটা আবহ তৈরি করে। কারণ, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়। ভোটারদের নিরাপত্তা, প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলা, সুশীল সমাজের পরামর্শ গ্রহণ করা, অন্য অংশীজনদের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং আপনাদের বুদ্ধি-বিবেচনা কাজে লাগিয়ে প্রত্যাশিত নির্বাচনটি আপনারা জাতিকে উপহার দিবেন।

সভা থেকে বের হয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য যা যা করা দরকার, তা আমরা করব।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্বাচনের জন্য যা যা আলোচনা করা প্রয়োজন সবই খোলা মনে আলোচনা করেছেন। সমস্যা ও চাহিদাসহ আরো নানা বিষয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। আমরা সেসব আলোচনা শুনেছি এবং তাদেরকে সব  বিষয়ে আশ্বস্ত করেছি। তাদের শুধু নিয়মমাফিক কাজ করতে বলা হয়েছে, যাতে করে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে যা যা করণীয় সব করা হবে বলে তাদেরকে জানানো হয়েছে।