সরকারের সহযোগিতায় দুর্গোৎসবে মেতেছে হিন্দু রোহিঙ্গারা
শারদীয় দুর্গোৎসবে মেতেছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার ঘটনায় গত বছর দুর্গোৎসব পালন করতে না পারলেও এ বছর দুর্গাপূজা পালনের জন্য তাদের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এই দুর্গোৎসবে হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণের পাশাপাশি শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে নতুন কাপড়সহ নানা সামগ্রী পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূজার যাবতীয় আয়োজন ও শুভেচ্ছা উপহার পেয়ে অনেক আনন্দিত তারা। একই সঙ্গে নির্ভয়ে পূজা উদযাপনের জন্য কক্সবাজার জেলা পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তারা স্বাচ্ছন্দ্যে দুর্গোৎসব পালন করতে পারছেন।
কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি সুমন্ত রুদ্র জানান, গত বছর তাঁরা দুর্গাপূজা পালন করতে না পারলেও এ বছর অনেক ভালোভাবে পূজা পালন করতে পারছেন।
এছাড়াও অন্যান্য হিন্দু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা যেন ভালোভাবে পূজা উদযাপন করতে পারেন সেজন্য বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছে। সরকারের সহযোগিতায় তারা মিয়ানমারের থেকেও বাংলাদেশে ভালোভাবে দুর্গাপূজা পালন করতে পারছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ ও মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘এই পূজা উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সকল দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেছি। থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাসহ এই পূজাকে কেন্দ্র করে তাঁদের জন্য শাড়ি, লুঙ্গি, খাবারসহ অন্যান্য আয়োজনও আমরা করেছি। আর এজন্য মানবিকতার পরিচয় দিয়েছি আমরা। এখন রোহিঙ্গা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে।’
দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা হিন্দু সম্প্রদায়কে উপহার সামগ্রী দিচ্ছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। ছবি : এনটিভি
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, মিয়ানমার থেকে তাদের বিতারিত করা হয়েছে, এজন্য তারা অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তারা চায় তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে। তারা যেন নিরাপদে নির্বিঘ্নে ফিরে যেতে পারে সরকার সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করছে।
মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, দুর্গোৎসবে হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা পুলিশ। অন্যান্য ক্যাম্পের তুলনায় হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকগুণ বেশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর মুসলিম রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১৬৫ পরিবারের ৫২৩ জন হিন্দু রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ছয় পরিবারের ২৭ জন হিন্দু পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত গেলেও ১৫৯ পরিবারের ৪৯৬ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে বিশেষ নিরাপত্তায় রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এসব হিন্দু রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের দুর্গোৎসবেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্গোৎসব পালন থেকে প্রতিমা বিসর্জনের যাবতীয় সুযোগ সুবিধাসহ ত্রাণের পাশাপাশি শুভেচ্ছা উপহারও পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতদিন রাখাইনে ছোট পরিসরে হিন্দু রোহিঙ্গারা দুর্গা পূজা উদযাপন করে আসছিলেন। এবার বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে দুর্গোৎসব পালনে সুযোগ পাওয়ায় আনন্দিত তারা।
শারদীয় দুর্গোৎসবে মেতেছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু রোহিঙ্গা শিশুরা। ছবি : এনটিভি