কষ্ট পেয়ে তাঁরা রাজধানীতে ছুটে এলেন
সারা রাত লঞ্চে ছিলেন বরিশালের সানজিদা রহমান (২৩)। প্রিয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবর শুনেছেন গতকাল বৃহস্পতিবারই। সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা আসবেন। সকালে সদরঘাট নেমেই সোজা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করেছেন। অপেক্ষার প্রহর যত কমেছে, ততই বেড়েছে সানজিদার চোখের পানি।
‘তিনি নেই, আর গান গাইবেন না, এটা ভাবতেই পারছি না।’ সানজিদা শেষবারের মতো একনজর দেখতে পেরেছেন আইয়ুব বাচ্চুকে। সানজিদা জানান, বাচ্চুর গাওয়া ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, তাই তোমার কাছে ছুটে আসি’ এই গানটি তাঁর খুব প্রিয়।
সানজিদার ভাগ্য ভালো। কিন্তু নোয়াখালী থেকে সারা রাত বাসে করে ঢাকায় আসা কামাল হোসেন ও ইয়াসিন মিয়ার ভাগ্য খারাপ। এইচএসসিতে পড়া দুই ছাত্র আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবর পেয়েই সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা আসার। রাতেই বাসে উঠেছেন। কামাল বলেন, ‘গতকাল রাতে বাসে উঠি। তাঁকে এক নজর দেখতে চাই। আর তো দেখতে পারব না।’
কিন্তু দীর্ঘ লাইনের কারণে কফিন পর্যন্ত যেতে পারেননি কামাল ও ইয়াসিন। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ঘোষণা করা হয়, সময় শেষ। এখন আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় ঈদগাহে। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম জানাজা।
ইয়াসিন বলেন, ‘কষ্ট লাগছে খুব। এমনিতেই খারাপ লাগছে। তার ওপর উনাকে না দেখতে পেরে আরো কষ্ট হচ্ছে।’ তবে মরদেহবাহী গাড়ির পেছনে ছুটলেন দুজন। সঙ্গে বহু মানুষ। জুমার নামাজ পড়েই যে কিংবদন্তির জানাজা।
সানজিদা বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর গানগুলো সারা জীবন মনে থাকবে। সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে, কষ্ট পেতে ভালোবাসি এ গানগুলো ভুলি কীভাবে বলুন। মানুষটা নাই থাকল, কিন্তু গান তো বেঁচে থাকবে।’
হাতে একটা গিটার নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুকে দেখতে যান নারায়ণগঞ্জের পাভেল সাহা। তিনি সরকারি তোলারাম কলেজে স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র। তিনি বলেন, ‘আমার জীবন সুন্দর করেছে আইয়ুব বাচ্চুর গান। তাঁর গান আমার জীবন বদলে দিয়েছে। তার গাওয়া গানগুলো সারাটা জীবন মনে থাকবে। গান দিয়েই বেঁচে থাকবেন আইয়ুব বাচ্চু।’
গতকাল বৃহস্পতিবার অসুস্থ অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় আইয়ুব বাচ্চুকে। সেখানে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।