চেয়ারম্যানের কবরের সঙ্গেও শত্রুতা!
সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত চেয়ারম্যানের কবরে আগুন ধরাতে দুই লিটার পেট্রল এনে এক লিটার ঢেলে ফেলেছিল কবরের ওপর। এ সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে আবদুল জব্বার নামের এক সন্ত্রাসী।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে।
এই গ্রামের মসজিদের সামনে কবর দেওয়া হয় কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহসাংগঠনিক সম্পাদক কেএম মোশাররফ হোসেনকে। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুজন ব্যক্তি দুটি বোতলে দুই লিটার পেট্রল নিয়ে চেয়ারম্যান মোশাররফের কবরের ওপর কিছু কাগজপত্র জড়ো করে আগুন ধরানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ সময় গ্রামের চৌকিদার শাহিন তা দেখে ফেলেন। তিনি দ্রুত ধাওয়া করে একজনকে ধরে ফেলেন। তাঁর নাম আবদুল জব্বার। অপরজন পালিয়ে যান।
নিহত চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছে পুলিশকে বলে জানিয়েছেন আটক জব্বার।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে কৃষ্ণনগর বাজারে যুবলীগ কার্যালয়ে বসে থাকাকালে চেয়ারম্যান কেএম মোশাররফ হোসেনকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় একই ইউপির সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুল জলিল গাইন ওরফে ডাকাত জলিল ওরফে খুনে জলিলকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন নিহতের মেয়ে সাথিয়া পারভিন। আসামি আবদুল জলিল গাইনকে ১৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে সাতক্ষীরায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ পরদিন জলিলকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য কৃষ্ণনগরে যাওয়া মাত্র হাজার হাজার লোক এসে জোর করে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়। ক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান মোশাররফকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল সেখানেই তাঁর হত্যা মামলার প্রধান আসামি জলিলকে পিটুনি দিয়ে হত্যা করে লোকজন। গণপিটুনি থেকে রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
এদিকে মৃত্যুর পর জলিল গাইনের লাশ গ্রহণ করেননি তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পুলিশী পাহারায় ১৬ সেপ্টেম্বর লাশ গ্রামের বাড়ি কৃষ্ণনগরের শংকরপুরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী বাধা দেয়। এমনকি তাঁর জানাজাও করতে দেয়নি। এ অবস্থায় জলিলকে কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়।