শেষ ইচ্ছানুযায়ী এ দেশেই সমাহিত হলেন ফাদার মারিনো
নিজ দেশ ছেড়ে ফাদার মারিনো রিগন বাংলাদেশে কাটিয়েছিলেন কয়েক যুগ। মিশে গিয়েছিলেন এ দেশের মানুষের মধ্যে। এমনকি বারবারই এ দেশের মাটিতে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছে জানিয়েছিলেন এই ইতালীয়।
অবশেষে মারিনোর ইচ্ছে পূরণ হলো। আজ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে ফাদার মারিনোকে সমাহিত করা হয়েছে বাগেরহাটের মোংলার শেহলাবুনিয়ার ক্যাথলিক গির্জার সামনে। এই গির্জাতেই জীবনের একটা দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ফাদার মারিনো।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বীরপ্রতীক খেতাব ও স্বাধীনতা পদক পাওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। ফাদার রিগনের মরদেহ বাংলাদেশে আনতে ইতালিতে বসে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ছিলেন ইতালির মিলানের কনসাল জেনারেল ইকবাল হোসেন। ঢাকায় আনার পর রিগনের মরদেহ গ্রহণ করেন সাজ্জাদ আলী।
কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘ফাদার মারিনো রিগন বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৯৫৩ সালে। এরপর তিনি মিলেমিশে বাংলাদেশের একজন হয়ে গিয়েছিলেন। বহু বছর তিনি এই দেশে ছিলেন। এ দেশের জন্য তিনি অনেক জনহিতকর কাজ করেছেন। ১৭টা স্কুল করেছেন, চার্চ করেছেন, মানুষের কল্যাণ করেছেন, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা, শরণার্থীদের চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে। যার জন্য জাতি তাঁকে লিবারেশন ওয়্যার অনার দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাঁকে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ফাদার মৃত্যুর আগে ইতালিতে বলে গিয়েছিলেন, বাংলার মাটিকে তিনি ভালোবাসেন। এ মাটিতেই যেন তাঁর স্থান করা হয়। সেটা করার জন্যই আমরা সবাই একত্রে চেষ্টা করেছি।’
রিগনকে সমাহিত করার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সদ্য সাবেক সচিব ড. নমিতা হালদার।
নমিতা হালদার জানান, তিনি এ বিষয়ে কাজ করতে দায়িত্ব পাননি। ফাদার মারিনোকে সমাহিত করতে তিনি স্বেচ্ছায় এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।
আজ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে ফাদার মারিনো নিগনকে মোংলার শেহলাবুনিয়ার ক্যাথলিক গির্জার সামনে সমাহিত করা হয়। ছবি : এনটিভি
নমিতা হালদার জানান, রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুযায়ী কেবিনেট ডিভিশন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের চারজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ছিলেন ফাদারকে সমাহিত করার এই আনুষ্ঠানিকতায়।
নমিতা হালদার বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সব আয়োজন করেছে। আমি শুধু তাদের সঙ্গে ছিলাম। আমি তেমন কিছু করেছি বলে মনে হয় না। তবে, তাঁর ইচ্ছেটা বিভিন্ন জায়গায় আমি জানিয়ে দিয়েছি। তিনি ২০০১ সাল থেকে এই ইচ্ছে প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। ২০০১ সালে একবার, ২০০৯ সালে একবার, মানে যতবার তিনি মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, ততবারই উনি এই কথাটি বলেছেন। যখন উনি অসুস্থ বোধ করতেন বেশি, তখনই বলতেন। ২০১৪ সালে যখন উনাকে নিয়ে যাওয়া হয়, যখন তিনি মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন- তখন কিন্তু উনি শুধু বলার জন্য বলেননি, তখন তিনি শর্ত দিয়েছেন যে, আমি যেতে পারি কিন্তু আমাকে এখানে সমাহিত করতে হবে।’