ব্যারিস্টার মইনুলের পরোয়ানায় কোনো ধারা ছিল না : আইনজীবী
সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায় রংপুরের মানহানির মামলার পরোয়ানায় কোনো ধারা ছিল না বলে শুনানিতে অভিযোগ করেছেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পক্ষের আইনজীবীরা।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে জামিন শুনানির সময় ব্যারিস্টার মইনুলের আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা করা হয়েছে যা আইন বহির্ভূত। মামলার ঘটনাস্থল রংপুরে না। ঢাকায় ঘটে থাকলে ঢাকায় মামলা হবে।
মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আইন অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মামলা করবেন। এ ছাড়া এ মামলায় যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে সেখানে কোনো ধারা নেই। মামলা কি তাও আমরা জানি না।
এরপরে মাসুদা ভাট্টির পক্ষের আইনজীবী ঢাকা জেলা বারের সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, একটি টিভির টকশোতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন প্রখ্যাত সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলে যে কটূক্তি করেছেন তাতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি দেশ-বিদেশে অপমানিত হয়েছেন। মাসুদা ভাট্টি একজন নারী। তিনি অপমানিত হওয়ায় গোটা নারী সমাজ অপমানিত হয়েছে। এখানে যেকোনো নারী সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা দায়ের করতে পারেন।
কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘মাসুদা ভাট্টি ব্যারিস্টার মইনুলের মেয়ের বয়সী। ব্যারিস্টার মইনুল তাঁর কাছে মা বলে ক্ষমা চাইতে পারতেন। কিন্তু তিনি (মইনুল) লিখিত ক্ষমা চাইলেন।’
এর আগে আজ দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ব্যারিস্টার মইনুলকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সোয়া ১টার দিকে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলামের আদালতে তাঁর জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। ব্যারিস্টার মইনুলের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ঢাকা বারের সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, আবুল কালাম আজাদসহ একাধিক আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি কাজী নজীবুল্লাহ হিরুসহ একাধিক আইনজীবী।
শুনানির সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হলে কয়েক দফা শুনানি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আদালতের বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে আদালতে হাজির করা নিয়ে আজ আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ছিল। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল রাত ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের প্রকাশক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহাবুব আলম জানান, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে মানহানিকর উক্তির অভিযোগে রংপুরে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। এ মামলায় পুলিশ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জেএসডির সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।
রাত ১০টার দিকে ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর সেখানে হাজির হন ব্যারিস্টার মইনুলের আত্মীয়স্বজন ও আইনজীবী। সেখানে তাঁর আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মাসুদা ভাট্টি মানহানির মামলা করেন। আরো দুজন মহিলা মামলা করলেন সম্পূর্ণভাবে বেআইনিভাবে। আমি মনে করি, এটা মানহানির মামলা না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য দেশের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি হিসেবে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
গত ১৬ অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকা, ভোলা, জামালপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর ও কুড়িগ্রামে একটি করে এবং কুমিল্লায় দুটি মামলা করা হয়। এসব মামলার মধ্যে ঢাকা, জামালপুর ও কুড়িগ্রামের মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল।