সময় থাকতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি মানার আহ্বান
সময় থাকতে ৭ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের যে সাত দফা দাবি এগুলো সময় থাকতে মেনে নিন।’
আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ির নূর আহমদ সড়কে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়ার আর ব্যাপার নেই, এটা তো হওয়ার ব্যাপার। আর কত চাওয়া হবে। আজকে আমাদের যে সাত দফা দাবি এগুলো সময় থাকতে মেনে নিন। এটা অমান্য করার জন্য বিচার হবে। আর যত বড় সে ২০১৪ থেকে, সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে, এর জবাবদিহিতা সেটাও জনগণ আপনাদের কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে।’
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভোট দেবেন, জনগণ ভোট করবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবেন। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো যাবে, জনগণকে বলবেন, জনগণ তার ইচ্ছামতো ভোট দিবে। আপনারা সেটা মানতে রাজি নন। কারণ আপনারা জানেন, যে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, জনগণ যদি ভোট দিতে পারে, তাহলে জনগণ এই ভাঙা নৌকায় আর উঠবে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকার ভয় পেয়েছে। সভা করতে দেয় না। রাস্তার অর্ধেক দিয়েছে। লালদীঘি মাঠ চেয়ে পাইনি। পুলিশ ২৫টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। রাস্তায় অনুমতি দিয়েছে। ফলে মানুষের কষ্ট বেড়েছে।’
চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ির বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আজ শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : এনটিভি
এ সময় সাত দফা দাবি আদায় না করে ফিরবেন না বলেও জানান মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘কারো কাছে মাথা নত করব না, পরাজিত হব না। গায়ের জোরে বন্দুকের নলের মুখে কেউ কোনোদিন টিকে থাকতে পারেনি, পারবে না। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে লড়াই চলছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) আটক করে নিয়ে গেলেন, এরপর কারাগারে পাঠালেন। এত ভয় কেন? আপনাদের ভয়ের কারণ, আপনারা জানেন যে, যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় আপনাদের ভাঙা নৌকায় জনগণ আর উঠবে না। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণকে বাধা দিয়ে বিশ্বের কোনো সরকার ঠিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশেও পারবে না। এখন নতুন লড়াই শুরু হয়েছে। অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াই। গত ১০ বছরে আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। অনেক মা-বাবা তাদের সন্তান হারিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ কারাগারে বন্দী।’
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, প্রশাসন, সিভিল, পুলিশ এবং সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে আপনারা এ সরকারের বেআইনি হুকুম না মেনে, জনগণের পাশে দাঁড়ান। তা না হলে কিন্তু একদিন, জনগণের আদালতে আপনাদেরও বিচার হবে। হাজিরা দিতে হবে।’
এ সময় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমাদের সাথে আলাপ করা ছাড়া, তফসিল যদি ঘোষণা করেন তাহলে বুঝব, আপনি নির্বাচন বানচাল করতে চান। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই। নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করবেন না।’
চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউরিতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে হাতে হাত ধরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ছবি : ফোকাস বাংলা
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ওরা সব সময় বলবার চেষ্টা করেছে, আমাদের অধীনেই নির্বাচন হবে। আমরা সরকারে থাকব। আমাদের কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। আমরা বলতে আসছি, তোমাদের অধীনে নির্বাচন হবে না। তোমরা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তোমাদেরকে আমরা সমস্ত ঐক্যবদ্ধ জনগণের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে তারপরে ছাড়ব।’
আজকের সমাবেশে জোটের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, হাজার হাজার ভৌতিক মামলা দিয়ে সরকার নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। হেরে যাওয়ার ভয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না ক্ষমতাসীনরা।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর প্রমুখ। তাঁরা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি জানান। ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য দেন ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের নেতারা।
১৪ শর্তে সিলেটে সমাবেশ হওয়ার পর চট্টগ্রামে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পরে লালদীঘি ময়দানে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে ২৫ শর্তে নাসিমন ভবন ও বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। পরে আজ দুপুরে সমাবেশটি শুরু হয়। এরপর রাজশাহী ও ঢাকায়ও সমাবেশ করার কথা রয়েছে তাদের।