চলতি অধিবেশনেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কিছু ধারার অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তাঁরা এই আইনকে গণতন্ত্র বিরোধী কালো আইন বলেও আখ্যা দেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পরিপন্থী এই আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো সংসদের চলতি অধিবেশনেই সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা এ দাবি জানান।
সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ‘মুক্ত গণমাধ্যম : প্রেক্ষিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ল' রিপোর্টার্স ফোরাম। এতে বক্তারা বলেন, এই আইনের বেশ কিছু ধারা অপব্যবহারের সুযোগ আছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী, হয়রানির বিপক্ষে তাদের প্রয়োজনীয় রক্ষাকবচ এই আইনে অনুপস্থিত।
আলোচনায় আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে যে আইনের অপব্যবহার হবে। যেহেতু আমরা ৫৭ ধারারও দেখেছি প্রচুর অপব্যবহার ইতোমধ্যে হয়েছে। এই অপব্যবহারের জন্য কি জবাবদিহিতার ব্যবস্থা আছে? সেই এসআই যে আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবে, বা সেই বিচারক যার কারণে আমি হয়তো মাসের পর মাস, হয়তো বছরের পর বছর জেল খাটব তাঁর বিরুদ্ধে আমি কখনো কি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনি আপনার স্বাধীন মেধা, অনুসন্ধানী মানসিকতা, স্বাধীন সাংবাদিকতা, আপনার দায়িত্ববোধ থেকে যদি কোনো দুর্নীতির কোনো রিপোর্ট করেন, আপনি মামলা খান আর না খান সমস্ত সময় আপনাকে এই ভীতি আচ্ছন্ন করে রাখবে।
আলোচনায় অংশ নেওয়া জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা আইনের বিতর্কিত নয়টি ধারা সংশোধনের দাবি জানান।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘মূল অপরাধী ও সহায়তাকারীর একই সাজা। ন্যূনতম শাস্তি নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ সবই ন্যায়বিচারের মৌল নীতি এবং আদালতের পরম ও অন্তর্নিহিত ক্ষমতার পরিপন্থী।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি শাবান মাহমুদ বলেন, ‘উত্তমভাবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই আইনের বিশেষ করে ৩২ ধারা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক একটি ধারা। এখানে আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সকল পথ প্রতিবন্ধকতায় ভরা।’
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আওয়ামী লীগও বলেছে পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসলে, তারা এই আইনটাকে সংশোধন করবেন। যদি করতেই চান তাহলে এই সংসদেই দয়া করে আইনটি সংশোধন করে অন্তত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে দিন।’
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘আলোচনা সাপেক্ষে এটা পরিবর্তন পরিবর্ধন করা যায়। এটা কোনো বাইবেল না যে এটার কোনো পরিবর্তন করা যাবে না, বাতিলও করা যাবে না। সব কিছুই সম্ভব।’
ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হাসান জাবেদের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি সাইদ আহমেদ খান।