‘প্রত্যাশা পূরণের’ বার্তা দিয়ে সংলাপে দুপক্ষের নেতারা
‘প্রত্যাশা পূরণের’ বার্তা দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের মোর্চা সংগঠন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সংলাপে বসেছেন। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে বসেন দুই দলের নেতারা।
সংলাপে বসার আগে আজ সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উভয়েই ‘প্রত্যাশা পূরণের আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন। প্রথম দফায় অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়েই আজকে দ্বিতীয় দফায় এই সংলাপ হচ্ছে।
নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে ধারাবাহিক সংলাপ চলছে, তার মধ্যে শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেই দ্বিতীয় দফায় সংলাপ হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের।
এর আগে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহার, সভা-সমাবেশের বাধা না দেওয়া ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন ক্ষমতাসীন নেতারা। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হবে কিংবা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়ে যায়। আজকে সেইসব বিষয়েই আলোচনার টেবিলে প্রাধান্য পাবে বলে নেতাদের বক্তব্য থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া গায়েবি মামলার একটি তালিকাও দেওয়া হবে বলে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সকালে গণভবনে প্রবেশের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা, আমরা সেই প্রত্যাশার সঙ্গে একাত্ম। মানুষ যা ভাববে, প্রত্যাশা করবে… রাজনীতিটা কার জন্য করি? মানুষের জন্য করি। মানুষ যা প্রত্যাশা করে, তার সঙ্গে আমরা যাতে একাত্ম থাকতে পারি, সেটাই আমাদের কাম্য।’
অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আমাদের সাত দফা দাবি তুলে ধরব। এখন পুরো জিনিসটা নির্ভর করছে সরকারের ওপর, যেটা বারবার বলে এসেছি। সরকার যদি সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাখতে চায়, একই সঙ্গে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চায়, জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে চায়, তাহলে নিশ্চয়ই এই দাবিগুলো নিয়ে একটি সুচিশ্চিত একটি মতামত আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক ঐক্যের নেতা এস এম আকরাম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন—আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
এর আগে গত ১ নভেম্বর শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল গণভবনে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন ২০ সদস্যের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংলাপে বসে। সেদিন সংলাপ শেষে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা অভিযোগ করেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তাঁদের সাত দফা দাবি উত্থাপন করলেও সভা-সমাবেশ নিয়ে কিছু ভালো কথা শোনা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান পাননি।
এরপর ছোট পরিসরে সংলাপের জন্য গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এরই অংশ হিসেবে আজকে দ্বিতীয় দফা সংলাপ হচ্ছে।