ভৈরবে বিএনপি-যুবলীগ সংঘর্ষ, ভাঙচুর
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় উঠান বৈঠককে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় পাঁচ থেকে ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
এ ছাড়াও উপজেলা বিএনপির ভৈরব বাজারের ডাইলপট্টিস্থ অফিস, বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঠিকাদারী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অফিসও ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভৈরব পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চন্ডিবের মধ্যপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে উঠান বৈঠক করছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ওই বৈঠককে কেন্দ্র করে বিএনপি ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অভিজিৎ চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে এসআই অভিজিৎ চৌধুরী, পুলিশ সদস্য আব্দুল হাকিম, আব্দুর রহমান ও মো. সেলিম মিয়া আহত হন।
সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর করা হয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আক্তার হোসেনের একটি ওষুধের দোকানসহ চার-পাঁচটি বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। উভয়পক্ষের মারমুখী অবস্থানের কারণে একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিসুজ্জামান। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি প্রশাসনের।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। ছবি : এনটিভি
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বাহালুল খান বাহার চার পুলিশ সদস্য আহতের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন জানান, সংঘর্ষের খবর পাওয়া মাত্রই সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুজ্জামানকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
এদিকে ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁরা ওই এলাকার একটি বাড়িতে নির্বাচনী উঠান বৈঠক করার সময় পৌর যুবলীগের কর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে তিনিসহ সাতজন নেতা-কর্মী আহত হন। এ ছাড়া দলের কর্মী-সমর্থকদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁয় হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ভাঙচুর করা হয় চারটি অটোরিকশা, ভৈরব বাজারস্থ দলীয় অফিস, তার নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অফিস। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর যুবলীগের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন ইমন জানান, তিনি তাঁর কয়েকজন নেতা-কর্মী নিয়ে ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন ওইপথে। তাদেরকে দেখামাত্রই বিএনপি সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনিসহ তাঁর পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বিনা উসকানিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে আহত করা এবং দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরসহ কর্মী-সমর্থকদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, নির্বাচনী পরিবেশকে অশান্ত করে ফায়দা লুটতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করেন।