মনোনয়ন নিয়ে ধোয়াশাঁ ফরিদপুর-১ আসনে
ফরিদপুরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আসন বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালী এই তিন থানা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসন। এ আসনে কে ধরছেন নৌকার হাল, এ আলোচনায় মুখরিত ওই জনপদ।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমানসহ দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন মোট ২০জন। আর মনোনয়ন এখনো ঘোষণা না হওযায় এ এলাকায় এখন মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাট এক ধোয়াশাঁ। কে হচ্ছেন একাদশ নির্বাচনে নৌকার মাঝি।
কখনো শোনা যাচ্ছে সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য, আমিন জয়েলার্সের মালিক কাজী সিরাজুল ইসলামের কথা, কখনও আলোচিত হচ্ছে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান দিলীপ রায়ের কথা।
তবে সবশেষে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে উঠে এসেছেন সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মঞ্জুর হোসেন ওরফে বুলবুল। গত চারদিন ধরে তিনিই আলোচনার শীর্ষে। আর এমন একজন অপরিচিতি মুখের নাম আসার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কার্যত ঝিমিয়ে পড়েছেন।
মঞ্জুর হোসেন রূপালী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল গ্রামের বাসিন্দা। গত এক বছর ধরে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসনে চোখে পড়ার মত মনোনয়ন প্রত্যাশী মঞ্জুর হোসেনের প্রচারণা বা কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। তার এ নামটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই এ বিষয়টি তৃণমূলে যথেষ্ট আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওই এলাকার ছয় নেতা ও কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এ বিষয়টি একটি অন্যরকম ঘটনা হিসেবে দেখছেন। তাঁদের অভিমত, মঞ্জুর হোসেন রাজনীতিতে একটি অপরিচিত নাম। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও দলীয় মনোনয়ন পেলে এত অল্প সময়ে তিনি কতটা সফল হবেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। পাশাপাশি এ আসনে বিএনপি থেকে শাহ জাফরের মত একজন প্রার্থী রয়েছে। এর ফলে মনোনয়ন বঞ্চিতদের নানা ধরনের নেতিবাচক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ারও অবকাশ আছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে ওই তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সাথে। তবে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তাঁরা কথা বলেছেন।
বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিকুল মীরদাহ বলেন, ‘উনি (মঞ্জুর) একজন অপরিচিত মানুষ। এ জাতীয় মানুষকে মনোনয়ন দিলে নেতা কর্মীরা কীভাবে গ্রহণ করবেন তা বুঝে উঠতে পারছি না। এ সিদ্ধান্ত ভালো হবে না। তিনি (মঞ্জুর) একেবারে নতুন মানুষ, যাকে এলাকার মানুষ চেনেই না।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন বলেন, ‘শুনেছি উনাকে (মঞ্জুর) মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমার বলাতে তো মনোনয়ন ঠেকবে না। কথা বলতে হচ্ছে সতর্কতার সাথে। কেননা রাজনীতিতে পরশ্রীকাতরতা ও ল্যাংমারা বেশি চলে। পরবর্তীতে আমার কথা যার বিপক্ষে কথা যাবে তিনি হয়তো আমার প্রতি ক্ষোভ পুষে রাখতে পারেন। তবে শেখ হাসিনা উনাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন কঠিন হবে। হাড্ডাহাডি লড়াই হবে। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে মনোনয়ন দিলে এতটা বেগ পেতে হতো না।’
মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মির্জা মনিরুজ্জামান ওরফে বাচ্চু বলেন, ‘লোকজনের মাধ্যমে শুনেছি মনোনয়ন পাচ্ছেন সাবেক সচিব। উনাকে (মঞ্জুর) রাজনীতিতে কোনদিন দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘যারা মনোনয়ন চেয়েছেন, তারা সকলে জেতার মত যোগ্য প্রার্থী। কেউ কম ভোটে জিতবে কেউ বা বেশি ভোটে জিতবে। ঠগার কোন কারণ নেই। নেত্রী (শেখ হাসিনা) এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি আসন নিজে দেখভাল করছেন।’
এ ব্যাপারে সাবেক সচিব মঞ্জুর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজনের নাম রটলে, অরেকজন পিছিয়ে পড়েন। আসলে এখন পর্যন্ত কেউ জানে না কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। লোকে একজন ভালো মানুষকে তাদের নেতা হিসেবে দেখতে চায়, এজন্য আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি।’
মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘আমি প্রচার প্রচারণা বেশি করিনি সত্যি তবে সেটা ওভার কাম করা কোন ব্যাপারে নয়। ইতিমধ্যে আমি এলাকার অনেক জায়গায় ঘুরেছি। আমার মনে হয় এই কয়দিনের ঘোরাঘুরি এবং লোকের মধ্যে আমাকে নিয়ে যে কিউরিসিটির সৃষ্টি হয়েছে সেটা আমার জন্য পজিটিভ। আমার চেহারা হচ্ছে নৌকা প্রতীক। এর সঙ্গে যুক্ত হবে আমার সততা আর ভালো মানুষের পরিচিতি। এভাবেই জনগণ আমার মূল্যায়ন করবে।’