‘কেবল সিইসির ভাগ্নে পরিচয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন সাজু’
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার আপন ভাগ্নে এস এম শাহজাদা সাজু। গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা টিটো বলেছেন, ‘কেবল সিইসির বোনের ছেলে, অর্থাৎ ভাগ্নে, এই পরিচয়ে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।’
শাহজাদা সাজু নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দাবি করলেও এলাকার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাঁকে কখনো রাজনীতির মাঠে দেখেননি বলে জানান গোলাম মোস্তফা। সাজু বর্তমানে আওয়ামী লীগ বা এর কোনো সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কমিটিতেও নেই বলে জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
গলাচিপা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ সৃষ্টি করেছেন এস এম শাহজাদা সাজু। বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম নুরুল হুদা সিইসির দায়িত্ব নেওয়ার পরই শাহজাদা সাজু নিজেকে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন। এস এম শাহজাদা সাজুর পিতৃকূলে কেউ কোনোদিন আওয়ামী লীগ করেননি। তিনি নিজেও সংগঠনে যুক্ত ছিলেন না বা এখনো নেই। অথচ কেবল সিইসির বোনের ছেলে, অর্থাৎ ভাগ্নে, এই পরিচয়ে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।’
অন্যদিকে, এ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি সাজুর মনোনয়ন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এবার পটুয়াখালী জেলার চারটি আসনের তিনটিতেই নতুন মুখ বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে একটিতে দুজনের নাম ঘোষণা এবং অপর একটিতে বর্তমান সাংসদ ফিরোজের ঋণখেলাপির মামলা নিয়ে জটিলতা থাকায় এখনো বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের জেলা সভাপতি ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীর সমর্থনে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবারের নির্বাচনেও এ আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মহাজোটের প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনই স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে বারবার নির্বাচিত সাংসদ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের ঋণ নবমবারের মতো পুনঃতফসিল করতে সোনালী ব্যাংকের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন। ফলে ঋণখেলাপি হওয়ায় আ স ম ফিরোজ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী মো. মঈনুল ইসলাম।
হাইকোর্ট থেকে ঋণখেলাপির আদেশ দেওয়ায় পটুয়াখালী-২ আসন থেকে দুজনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আ স ম ফিরোজের সঙ্গে মনোনয়ন পেয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল হক রেজা। তবে ঋণ পুনঃতফসিল করা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত স্থগিত করে দেওয়ায় বর্তমান সাংসদ আ স ম ফিরোজের নির্বাচন করতে আর বাধা নেই বলেও তাঁর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। শেষমেশ দলের হাইকমান্ড কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকার নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মহিবুর রহমান মুহিবকে। এখান থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। নতুন প্রার্থী পেয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অধিকাংশ খুশি হয়েছেন বলে জানা গেছে। কারণ এ আসনে মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে দলের একটি বিশাল অংশ প্রকাশ্য বিরোধিতায় মাঠে রয়েছেন।