ভিকারুননিসার সামনে বিক্ষোভ, ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সকালে স্কুলটির সামনে বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবক ও ছাত্রীরা। তাঁরা অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
এই খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে যান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। স্কুলে বাবার অপমানের পর ছাত্রীর আত্মহত্যার বিষয়টিকে ‘খুবই গুরুতর’ বলে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে তার (অরিত্রী) বিষয়গুলো চিহ্নিত করব, আমরা তদন্তের জন্য তিন দিন সময় দিয়েছি।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যা শোনা যাচ্ছে সেটি হলো, মেয়েটি অপমানিত বোধ করে বাড়িতে গিয়ে আত্মহত্যা করে। তাহলে বিষয়টা কতটুকু গভীর এবং সে কতটা মর্মাহত হয়েছে, সে কতটা কষ্টের শিকার হয়েছে যে সে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছে।’ তিনি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এদিকে অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষ আলাদা কমিটি গঠন করেছে। ঢাকা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইউসুফকে প্রধান করে গঠিত এ তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্যের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের উপপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ।
মঙ্গলবার স্কুলের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান স্কুলের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। তিনি জানান, তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে শান্তিনগরের বাসায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী আত্মহত্যা করে।
নিহতের বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, তাঁর বড় মেয়ে অরিত্রীর বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল অরিত্রী। সেখানে তার কাছে মোবাইল ফোন পান শিক্ষিকা। শিক্ষিকা অভিযোগ করেছেন যে অরিত্রী নকল করেছে। ওই সময় শিক্ষিকা মোবাইল সেট রেখে দেন। এবং তার বাবা-মাকে বিদ্যালয়ে যেতে বলেন। পরে গতকাল সোমবার তাঁরা মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যান।
দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘আমরা ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে তাঁদের ওই অভিযোগ শুনি। জোর হাত করে ক্ষমা চাই। মেয়েও পায়ে ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু তাঁরা কোনো কিছুই শুনতে না চেয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। বলেন, বের হয়ে যান, কাল এসে টিসি নিয়ে যাবেন। এ সময় দ্রুত বাসায় চলে যায় অরিত্রী। পেছনে পেছনে আমরাও যাই। বাসায় গিয়ে দেখি সে নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৪টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
অরিত্রী অধিকারী ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রভাতি শাখার ইংরেজি মাধ্যমে নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাদের বাসা শান্তিনগরে।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলায়। তিনি কাস্টমসের সিঅ্যান্ডএফের ব্যবসা করেন। তাঁর ছোট মেয়েও ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘অরিত্রীকে টিসি না দিতে আমি এবং তার মা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অরিত্রীকে আরেকবার সুযোগ দিলে হয়তো আমার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত না।’
এদিকে অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে হৃদয়বিদারক ও বাজে রকমের দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।