কালো নয়, স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই : মাহবুব তালুকদার
‘নির্বাচন আইনানুগ না হলে সে নির্বাচন কালো নির্বাচন। আমরা কালো নির্বাচন নয়, স্বচ্ছ ও সাদা নির্বাচন করতে চাই’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
আজ বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপরাধ দমনে গঠিত ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের ব্রিফিংয়ের সময় মাহবুব এ মন্তব্য করেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘সবার প্রতি সমআচরণ করতে হবে। আইনের চোখে যেন সবাই সমান থাকে। সবাই সমান অধিকার ভোগ করছে কি না, সেটাই বিবেচনার বিষয়। সব আইন প্রয়োগ হচ্ছে কি না, আপনারা সেটা খেয়াল রাখবেন।’
‘নির্বাচনের অনিয়ম রোধে ও আইনসিদ্ধ করার ব্যাপারে বিচারকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন’ উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে গেলে সতর্কতা থাকতে হবে। সর্বোচ্চ সাজার বিষয়ে লিগ্যাল মাইন্ডকে প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হবে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়।’
এ সময় স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাগ্যাবান যে, আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে যাচ্ছি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সাধারণত নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে এক পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা সফল হয় না। আমি মনে করি, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে ভারসাম্য থাকে। কমিশন ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সোনালি ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে। নিরপেক্ষ, পক্ষপাতমুক্ত নির্বাচন গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গণতন্ত্র নিত্যদিনের অনুপ্রেরণা।’
মাঠপর্যায়ের অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে এবং নির্বাচনী কর্তব্য পালনে সদা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আপনারা বিচারকরা আমাদের নির্বাচন কমিশনের শপথের অংশীদার। কমিশনারদের শপথ আপনাদের মাঝে সঞ্চারিত হয়েছে।’
মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সবার প্রতি সমান আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করবেন আপনারা।’
প্রশিক্ষণে আরেক কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি আইনানুগ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কাজটি সহজ করে দেবে।’
আরেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘নির্বাচনের সুষ্ঠু ও আস্থার পরিবেশ তৈরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন শুধু নয়, নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। দৃশ্যমানভাবে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন। সব ধরনের রাগ-অনুরাগের ঊর্ধ্বে উঠে, বিচারিক দায়িত্ব পালনের মতো করেই সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান আপনাদের দায়িত্ব।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এবারের নির্বাচন বৈচিত্র্যপূর্ণ নির্বাচন। সংসদ বহাল রেখে, সরকার অপরিবর্তনীয় আছে এমন অবস্থায়ই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যেহেতু এ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হতে যাচ্ছে, আগের যেকোনো সময়ের নির্বাচনের চেয়ে আইনের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’
এদিকে ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ওই দিন থেকে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ইভিএমের বিষয়ে বিশদ ধারণা নিতে বিচারকদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশন সচিব। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রশিক্ষণ শেষে ১০-১১ ডিসেম্বর ৬৪০ জন বিচারিক হাকিমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।