যমুনায় অবৈধ বালু উত্তোলন চলছেই
পাবনার বেড়া উপজেলায় অনুমোদিত কোনো বালুমহাল নেই। তারপরেও উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে এরইমধ্যে তিন-চারটি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে আছে নগরবাড়ি ঘাট ও নাকালিয়া বাজারসহ জেলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধন কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিত আবেদন দিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য দুই-একবার চালানো হয়েছে অভিযান। কিন্তু এত কিছুর পরও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে মাস খানেক বালু উত্তোলন কিছুটা কম থাকলেও এখন আবারও ব্যাপকভিত্তিতে শুরু হয়েছে উত্তোলন।
হুমকিতে আছে ১২টি গ্রাম
মোহনগঞ্জ থেকে ঢালারচর পর্যন্ত যমুনা নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে রয়েছে বালু উত্তোলনকারীদের একচ্ছত্র আধিপত্য। সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে নগরবাড়ী ঘাটের পার্শ্ববর্তী যমুনা নদী থেকে। প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক খননযন্ত্রের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে নৌকা বোঝাই করে পাড়ে আনা হয়। এর পর দীর্ঘ পাইপের মাধ্যমে বালু এনে এনে রাখা হয় নগরবাড়ী ঘাটের পাশে খোলা জায়গায়। সেখান থেকে শত শত ট্রাক বালুবোঝাই করে চলে যায় বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া নটাখোলা, কাজীরহাট, ঢালারচরের থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামের বেশির ভাগ অংশ ও চরপেঁচাকোলা গ্রামের প্রায় অর্ধেক অংশ যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে । হুমকিতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নাকালিয়া বাজারসহ অন্তত ১২টি গ্রাম।
জড়িত আছেন ২৫ থেকে ৩০ জন প্রভাবশালী
এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য যমুনার চর ও তীর সংলগ্ন ১৫টি গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে ‘সর্বদলীয় বালুকাটা প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করেছে। কমিটির উদ্যোগে নাকালিয়া বাজারের সামনের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত নটাখোলা ঘাটে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালান।
মোহনগঞ্জ থেকে ঢালারচর পর্যন্ত যমুনা নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ২৫ থেকে ৩০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি। নগরবাড়ীঘাট নলখোলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পুরানভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ এম রফিকউল্লার বিরুদ্ধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ আছে। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে।’
‘কোনো ক্ষতি হচ্ছে না’
মোহনগঞ্জ থেকে রাকশা পর্যন্ত এলাকায় বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘বালু উত্তোলনের ফলে কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বরং এতে নদীর নাব্যতা বজায় থাকছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে অপবাদ দিচ্ছে।’
বালুকাটা প্রতিরোধ কমিটি ও নাকালিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলামকে বলেন, ‘বালুদস্যুদের কারণে ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবারের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও কোনো ফল পাচ্ছি না।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ মাহমুদ হাসান বলেন, ‘গত সোমবার অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে চারটি ড্রেজার জব্দ ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যমুনার নাব্যতা রক্ষায় বিআইডব্লিটিএ নদীতে খননকাজ করছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাহজাদপুরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিআইডব্লিটিএ নদীতে নাব্যতা রক্ষায় খননকাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে বালু উত্তোলন করতে বলা হয়েছে।’