তালাক দেওয়ায় বাড়ি দখল, সাবেক ইউপি সদস্যের নামে মামলা
মেয়েকে তালাক দেওয়ায় তার শ্বশুরবাড়ি ও দোকান দখলের অভিযোগ উঠেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সাবেক ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন পান্নার বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগে পান্নাসহ তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জামাতা নোমানের মা রেনু বেগম। পরে ৫ নভেম্বর তাদের নামে সমন জারি করেন পাথরঘাটার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত।
এদিকে, এর আগে গত ২ নভেম্বর নোমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন স্ত্রী লায়লা আক্তার পপি। ওই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন নোমান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে পাথরঘাটার মানিকখালী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন পান্নার মেয়ে লায়লা আক্তার পপির বিয়ে হয়।
বিয়ের দুই বছরের মধ্যে পপির দুটি ছেলে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই পপি তাঁর বাবার বাড়িতে থাকতেন। এ নিয়ে দফায় দফায় শাশুড়ি রেনু বেগমসহ তার স্বজনরা পপি ও তাঁর স্বজনদের নানাভাবে বুঝিয়েছেন।
কিন্তু পপিকে ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মহিউদ্দিন পান্নাকে আইনি নোটিশ পাঠান নোমানের মা রেনু বেগম। পান্না বিভিন্ন সময় নির্বাচনী খরচ বাবদ ১১ লাখ টাকা নিয়েছিলেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। ওই টাকাও ফেরত চেয়েছেন রেনু বেগম।
নোটিশ পাঠানোর সাতদিন পরও শ্বশুরবাড়িতে ফিরে না আসায়, গত ২ অক্টোবর পপিকে তালাকের নোটিশ পাঠান নোমান।
এরপর ২৬ অক্টোবর নোমানের পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবা আবদুল খালেকের চিকিৎসার জন্য বাড়ি তালাবদ্ধ করে ঢাকায় আসেন রেনু বেগম।
২৭ অক্টোবর দুপুরের দিকে তাদের বাড়ির তালা ভেঙে বাড়ি দখল করে নেন মহিউদ্দিন পান্না, তাঁর মেয়ে লায়লা আক্তার পপিসহ অন্য স্বজনরা।
মামলায় বলা হয়েছে, ওই সময় ঘরের বালিশের মধ্যে লুকানো সাড়ে তিন লাখ টাকাসহ মূল্যবান কাগজপত্রও নিয়ে যায় তারা। একই সঙ্গে পাথরঘাটার নাচনাপাড়া ও মানিকখালি বাজারের তিনটি দোকান ঘরও দখল করেন তারা।
রেনু বেগমের প্রতিবেশী জাহানার বেগম বলেন, ‘রেনু ও তার স্বামী ঢাকায় যাওয়ার পরের দিন দুপুরের দিকে খালি বাসায় পান্না তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে পপিকে ঘরে উঠিয়ে দিয়ে যান। এরপর থেকে ওই ঘরে পপি তার দুই ছেলে ও স্বজনদের নিয়ে বসবাস করছেন।’
এ বিষয়ে পপির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেননি বাবা মহিউদ্দিন পান্না।
তবে, তালা ভেঙে রেনু বেগমের ঘরে ঢোকার কথা অস্বীকার করে পান্না বলেন, ‘রেনুর ছেলে নোমান আমার মেয়েকে এককভাবে তালাক দিয়েছে। এই তালাক আমরা মানি না। তাই পপির কাছে থাকা চাবি দিয়ে এই ঘরের তালা খুলে আমরা ঘরে প্রবেশ করেছি।’
আর দোকান দখলের বিষয়ে পান্না বলেন, ‘দোকান থেকে যে ভাড়া আসে তা নোমান-পপির দুই ছেলের পেছনে ব্যয় করি।’
এ বিষয়ে পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বি এম আশরাফ উল্লাহ বলেন, ‘বাড়ি দখলের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পপি, তাঁর দুই ছেলে ও অন্য স্বজনদের ঘরে দেখতে পেয়েছে। তবে পপিকে যে তালাক দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে পুলিশ তখন অবগত ছিল না। যেহেতু ঘটনাটি মামলায় গড়িয়েছে, তাই আদালতের মাধ্যমেই এ ঘটনার সমাধান হবে।’
রেনু বেগমের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেন বি এম আশরাফ।