‘আওয়ামী লীগই নির্বাচন বয়কট করবে কি না সেই ভয়ে আছি’
গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, গভীর রাতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি ও পুলিশী হয়রানির বন্ধসহ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি জানিয়েছেন মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনের বিএনপির প্রার্থী নাসের রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি দলের পক্ষ না হয়ে নিরপেক্ষ থেকে কাজ করা আহ্বান জানান।
প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র এম নাসের রহমান বলেন, নির্বাচন বয়কট কে করবে? মানুষের যে গণ জোয়ার ধানের শীষের জন্য হয়েছে এটার জন্য আওয়ামী লীগই এই নির্বাচন বয়কট করবে কি না সেই ভয়ে আছি। পুলিশের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করে বিএনপিকে এবার ঠেকানো যাবে না। কারণ জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ। যত বাধা বিপত্তিই আসুক না কেন নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত জনগণকে নিয়েই আমরা মাঠে থাকব।
এম নাসের রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা আমার নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার ও রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীকে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি দেখাচ্ছে যা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষ নির্বাচনের অন্তরায়। গত ৯ ও ১০ ডিসেম্বর জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জোটের ২৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে এবং নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত নেতাকর্মীদের বাড়িতে মধ্য রাতে পুলিশী তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে।
আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি, নির্বাচনে আমার দলের নিবেদিত নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ, সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহমদ, আশরাফ আহমেদ, পৌর কাউন্সিলর আয়াছ আহমদ, স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী,বায়েছ আহমদ, জেলা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি সম্পাদকসহ কয়েক শত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট গায়েবি মামলা রজু করে আমার নির্বাচনী কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে যে, মৌলভীবাজার মডেল থানায় সাত-আটটিসহ জেলার অন্যান্য থানায় বেশ কয়েকটি গায়েবি মামলা করে গোপন রাখা হয়েছে। এ ধরনের গায়েবি মামলা সরকারের চরম দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। সরকার যে জনবিচ্ছিন্ন এই গায়েবি মামলাগুলি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এখন আমাদের কোনো নেতাকর্মী বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও এ পর্যন্ত বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও তল্লাশি বন্ধ হয়নি। ২০ ডিসেম্বরের পরে নাকি বড় বড় নেতাদেরও ঘরছাড়া থাকা লাগবে। তাদের নাকি সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের আতঙ্কাবস্থায় নির্বাচন পৃথিবীর কোনো দেশে আর হয়েছে কিনা জানা নেই।
সাবেক সাংসদ নাসের রহমান অভিযোগ করেন, ‘ভোটের দিন যাতে সাধারণ ভোটারগণ কেন্দ্রে ব্যাপক উপস্থিতি না থাকে সেজন্য সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের নেতকর্মীরা গ্রামে গ্রামে ভোটারদের কাছে গিয়ে নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ভোটাররা যাতে নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে না যান সে কথা বলে আসছেন। কারণ তারা এখন বুঝতে পারছে তাদের পায়ের নিচে মাটি নাই। শহরের ও গ্রামগঞ্জের মানুষ এই অত্যাচারী ও জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে ধানের শীষে সিল মারার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাসের রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমাদের কোনো ঝামেলা হয়নি। তবে গত ১১ তারিখে দুপুরের দিকে রাজনগরের খেয়াঘাট বাজারে পুলিশের এক এএসআইয়ের বাঁধায় ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে মারামারি হবে এই ভয় দেখিয়ে তাদের ১০ জনের কাছ থেকে নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে।
বুধবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গলে বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী সভায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা পণ্ড করে দিয়েছে। শহরতলীর বিরাইমপুরে একটি নির্বাচনী সভার চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে তারা রীতিমতো তাণ্ডব চালায়। পুলিশকে জানানোর পরও কোনো সহায়তায় আসেনি বরং তাদের উপস্থিতিতেই এহেন কর্মকাণ্ড উৎসাহ যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাসের।