কোমর সোজা করে দাঁড়ান, ইসিকে ফখরুল
নির্বাচন কমিশনকে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে বললেন বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা স্টেডিয়ামে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। আমরা যা বলি তা শুধু শুনেন। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। অসহায়। নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, কোমর সোজা করে দাঁড়ান। সংবিধান ও রাষ্ট্র আপনাকে যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করুন। না পারলে চলে যান। কিন্তু কোনো অন্যায় করবেন না। অন্যায় করলে জনগণ মেনে নিবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সিইসি বলেছেন, দেশে নাকি গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে। সুবাতাস কেমন? সুবাতাস কি জনগণ নির্বাচনী সভায় আসতে না পারার সুবাতাস? বিরোধীদের প্রচার করতে না দেওয়া ও মাইক লাগাতে না দেওয়ার সুবাতাস? কী চমৎকার নির্বাচন! কিন্তু এই নির্বাচনেই আমাদের জিততে হবে। ৩০ তারিখ নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে দেশের মানুষ কি আলোতে যাবে নাকি অন্ধকারে থাকবে, স্বাধীন থাকবে নাকি পরাধীন, গণতন্ত্রে পথে থাকবে নাকি স্বৈরতন্ত্রে থাকবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আসবে নাকি আসবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুই সপ্তাহ আগে আমি বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে কারাগারে গিয়েছিলাম। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। হুইল চেয়ারে চলতে হয় তাঁকে। এর মধ্যেও তাঁর মুখে কোনো হতাশা দেখিনি। তিনি বলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জয় ছিনিয়ে আনো। তাহলে আমার মুখে হাসি ফুটবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বন্ধুরা গণতন্ত্রের মায়ের মুখের হাসির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করে ধানের শীষে ভোট দিতে হবে। আপনি একটি ভোট দেবেন। আর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে। এই প্রার্থীরা হলেন খালেদা জিয়ার প্রার্থী।
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, তারা বারবার বলে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। হ্যাঁ উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়ন হয়েছে তাদের। তাদের পকেট ভারি হয়েছে। বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম, পানির দাম, চালের দাম, বাড়ি ভাড়ার দাম বাড়ছে। রাস্তায় খানাখন্দে ভরা। শেয়ারবাজার লুট করেছে, ব্যাংক লুট করেছে। বলেছিলো, ঘরে ঘরে তরুণদের চাকরি দিবে। হ্যাঁ, চাকরি আছে। তবে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে চাকরি পেতে হয়। তাও ডিএনএ টেস্ট করে আওয়ামী লীগ হতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে তরুণদের চাকরি দিব। চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দিব। আমরা মেয়েদের বিনা বেতনে উচ্চশিক্ষা করার সুযোগ দিব, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। এই দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত দেওয়া যাবে না। দাড়ি টুপি পরলেই জঙ্গি বললে চলবে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের ওপর হামলা করা যাবে না। সব ধর্মের দেশ বাংলাদেশ।
জনগণের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ৩০ তারিখ ভোট দেবেন। আর শেষ পর্যন্ত পাহারা দেবেন। ভোট চুরি করতে দিব না। এরা আবার চুরিতে ওস্তাদ। শুনেছি, আগের রাত থেকে নাকি ভোট দেওয়া শুরু করবে। আপনারা আগের রাত থেকে ভোট পাহারা দেবেন। ৩০ তারিখ লড়াই করবো। অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ৩০ তারিখ বিজয়ী হতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের ডিসেম্বর।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জনসভায় বলেন, ‘সবাই, আপনারা শুধু নন, মা-বোনদেরও বলেন, তারাও, ঘর থেকে বেরিয়ে আসবেন, ৩০ তারিখ। সহ্য করেছি ১০ বছর ধরে। ২৯ তারিখ পর্যন্ত সহ্য করব। ৩০ তারিখে সহ্য করব না।
জনসভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা এখন কেন ক্ষমা চান? কারণ তিনিও জানেন তিনি জাতির কাছে ভুল করেছেন। এবার ধানের শীষের জয় কেউ আটকাতে পারবে না।
জনসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান, ২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ, ৪ আসনের প্রার্থী মনির হোসাইন কাসেমী, ৫ আসনের প্রার্থী এস এম আকরাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএন কামাল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম প্রমুখ।
এর আগে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে গুলশান থেকে ফখরুলের গাড়িবহর নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়। যাত্রাবাড়ী পেরিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়।
কাঁচপুর ব্রিজ অতিক্রম করে সোনারগাঁও উপজেলায় এসে সামনে হামলার আশঙ্কা থেকে হঠাৎ গাড়িবহর থেমে যায়। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী এসে নারায়াণগঞ্জ পুলিশ সুপারকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন। বন্দর এলাকায় হামলা হতে পারে আশঙ্কা থেকে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ নিজে এসে নিরাপত্তা দিয়ে জনসভাস্থলে ফখরুলের গাড়িবহর পৌঁছে দেন।