কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি সমর্থকদের ওপর দমন-পীড়ন
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর ও নিকলী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর অব্যাহত হয়রানি, দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার ও বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি।
আজ সোমবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের তমালতলা এলাকায় বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী অন্যান্য কর্মকর্তারা নীরব- নির্বিকার ও একপেশে ভূমিকা পালন করে দমন-পীড়নকারীদের মদদ দিচ্ছেন। কোনো কারণ ছাড়াই গত ২০ ডিসেম্বর নিকলী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ছাতিরচর ইউনিয়ন বিএনপির ৩৫জন নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। যে কারণে মামলার ভয়ে এখন ছাতিরচর এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া গত দুই-তিন দিন আগে নিকলী উপজেলার কারপাশা এলাকা থেকে বিএনপির কর্মী গোলাম ইয়াহিয়া, জারইতলা থেকে শফিকুল ইসলাম, ইন্নছ আলী, নিকলী সদর থেকে রফিকুল ইসলাম, মামুন মিয়া, নুরু মিয়া ও মো. মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে নিকলী উপজেলাজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বাজিতপুর উপজেলায় নির্বাচনের শুরুতেই ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামানসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে মিথ্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় নিকলী উপজেলার জারইতলা এলাকার বিএনপির কর্মী আতাউর রহমান ও সুমনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত শনিবার নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা বাজিতপুর উপজেলাধীন গজারিয়া ও বাংলা বাজার এলাকার ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেন। এমনকি বাজিতপুর ও নিকলীর পুরো এলাকায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ মজিবুর রহমান ইকবালের পোস্টার ও স্টিকার ছিঁড়ে ফেলেছে। সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাতে না আসতে পারে সেজন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলছে। এমতাবস্থায়, নির্বাচনী আসনে ক্যাম্প ভাঙচুর, পোস্টার ছেঁড়া, ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদান ও হয়রানি বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত শনিবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পুলিশ সুপার ও নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, জেলার সবকটি আসনেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের একই কায়দায় গ্রেপ্তার, নির্যাতন, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়েরসহ হুমকি ও সহিংস আচরণ অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধর-পাকড় ও নির্যাতনের মাধ্যমে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, ভোটবিহীন, একতরফা নির্বাচন করতে পারে।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের স্বার্থে আটক সব নেতাকর্মীকে মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার ও সরকার দলীয় সব দমন-পীড়ন ও নিযাতন বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ জেলার সব নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি ইসরাঈল মিঞা, আমিনুল ইসলাম আশফাক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলম, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ, সহসভাপতি কফিল উদ্দিন ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. মারুফ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।