হাঙ্গেরি যাচ্ছে রাবেয়া-রোকাইয়া
টানা এক বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর সরকারি খরচে হাঙ্গেরিতে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে মাথা জোড়া লাগানো দুই শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়া।
আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার মা-বাবা র হাতে সপরিবারে হাঙ্গেরি যাওয়ার বিমান টিকেট তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম।
গত নভেম্বরে শিশু দুটির বাবা চিকিৎসার জন্য তাদের ঢামেকে নিয়ে আসেন।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার আট লংকা গ্রামের স্কুলশিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা খাতুনের সন্তান তারা। মাথা জোড়া লাগানো শিশু দুটির নাম রাবেয়া ইসলাম ও রোকাইয়া ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছর ধরে মাথা জোড়া লাগানো শিশু বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে জার্মানি ও হাঙ্গেরির দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে শিশু দুটিকে দেখাই। তারা হাসপাতালেই দুই দফায় মাথায় এনজিওগ্রামের মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের প্রধান রক্তনালি পৃথক করেন।’
এরপর তারা শিশু দুটিকে হাঙ্গেরিতে নিয়ে যৌথ চিকিৎসা করাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
রাবেয়া ও রোকাইয়ার মা বাবার হাতে হাঙ্গেরি যাওয়ার বিমান টিকেট তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম। ছবি : এনটিভি
ডা. সেন আরো জানান, হাঙ্গেরিতে শিশু দুটির চিকিৎসার সকল তত্ত্বাবধান করবে জার্মানভিত্তিক ‘ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম জানান, দীর্ঘদিন শিশু দুটিকে বার্ন ইউনিটে প্লাস্টিক ও নিউরোসার্জন দ্বারা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেই তাদের চিকিৎসার দুই ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। এখন তৃতীয় ধাপের চিকিৎসার জন্য তাদের হাঙ্গেরি পাঠানো হচ্ছে। সেখানে পাঁচটি বিশেষজ্ঞ দল তাদের চিকিৎসা পরিচালনা করবেন। আনুমানিক তিন-চার মাস তারা সেখানে চিকিৎসা নেবে।
হাঙ্গেরিতে শিশু দুটির চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে আবুল কালাম বলেন, ‘সেখানে তাদের মস্তিষ্কের সফ্ট টিস্যু আলাদা করাই প্রথম কাজ। এর সঙ্গে সঙ্গে ইনজেকশনের মাধ্যমে তাদের মাথার খুলি ফুলিয়ে ভেতরে কিছুটা ফাঁকা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের পৃথক করার জন্য আমরা যে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে সফলতা ২০ শতাংশেরও কম। তবুও আমরা আশাবাদী। এখন থেকে আনুমানিক ছয় মাস পর ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাদের মাথা পৃথক করার কাজ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য দোয়া করি। তাদের বিরল অপারেশন হতে যাচ্ছে। যেন তারা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাবন করতে পারে। আশা করি, হাঙ্গেরি থেকে দেশে আসার পরে তাদের মাথা বিচ্ছিন্ন করাও সফলভাবে সম্পন্ন হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা ও আর্থিক অনুদানে তাদের বিদেশ পাঠানো হচ্ছে। এর সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করবেন তিনি।’