একুশে বা স্বাধীনতা পদকের মাধ্যমে সৈয়দ আশরাফকে সম্মান দেওয়ার দাবি
জনপ্রশাসন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বর্ষীয়ান এই নেতার ইন্তেকালে গভীর শোকাচ্ছন্ন তাঁর নিজ এলাকা সদর উপজেলার বীর দামপাড়া গ্রাম থেকে পুরো কিশোরগঞ্জ।
সদ্য প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে একজন সৎ, পরোপকারী, নির্লোভ ও নিরহংকারী মানুষ হিসাবে উল্লেখ করেছেন স্থানীয়রা।
যশোদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল হক বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার রায় বলেছেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কখনো অসৎ ও দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেননি। আমরা একুশে বা স্বাধীনতা পদকের মাধ্যমে সম্মাননা প্রদান করে তাঁর কার্যক্রমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করছি।’
যশোদল ইউনিয়নের বীর দামপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সৈয়দ আশরাফের প্রতিবেশী মো. শাহাবুদ্দিন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রসিক্ত নয়নে বলেন, ‘সে ছিল আমার বাল্যবন্ধু ও বয়সে আমার থেকে সাতদিনের ছোট। ছুটিছাটায় সে যখনই বাড়িতে আসতো, আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম, ঘুরে বেড়াতাম এবং গল্প গুজব করতাম। আমার সঙ্গে সে মনের সব কথা বলতো। মন্ত্রী হওয়ার পরও এই বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি। সব সময়ই আমার খবর রাখতো এবং যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিত।’
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাতো ভাই সৈয়দ আব্দুল্লাহ হাসান হারুন বলেন, ‘সে ছিল অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠ ও সৎ মানুষ। তাঁর এতটাই দেশ প্রেম ছিল যে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হওয়ার পর একবার আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি তো রাতদিন দেশের জন্য কাজ করছো। কিন্তু নিজের জন্য কি করেছো। সে উত্তর দেয় এই বলে, গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরই আমার ঘর, প্রতিটি মানুষই আমার স্বজন। কেউ আমার আলাদা নয়।’
যশোদল ইউনিয়নের বীর দামপাড়া গ্রামে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাড়ি। ছবি : এনটিভি
অপর চাচাতো ভাই সৈয়দ আল বোরহান বলেন, ‘ তিনি এতই অমায়িক ছিলেন যে বাড়িতে এলে আমাদেরকে সুযোগ না দিয়ে নিজেই প্রথম আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কুশল জিজ্ঞেস করতেন। সব সময়ই আমাদের খোঁজ-খবর রাখতেন। ছুটিতে বাড়িতে আসলে আমরা একসাথে খেলাধুলা ও আনন্দ-ফুর্তি করতাম।’
বীর দামপাড়া গ্রামে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি দেখাশোনা করেন খোরশেদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মা ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্ত্রী সৈয়দা নাফিসা ইসলাম প্রায় চল্লিশ বছর আগে আমাকে এই বাড়ি দেখাশোনার জন্য রেখে যান। তারপর থেকে আমি এই বাড়ি দেখাশোনা করছি। এই বাড়িতে সৈয়দ নজরুল ইসলামের জন্ম ও শৈশব কাটলেও পেশাগত কারণে তিনি পরিবার নিয়ে ময়মনসিংহ জেলা সদরে থাকতেন। আমার নিজের বাড়ি করার জন্য তাঁর মা আমাকে এই বাড়ির পাশেই ১৫ শতাংশ জায়গা দিয়ে গেছেন। ৭৫ সালের ঘটনার পর দীর্ঘ ১৭ বছর সৈয়দ আশরাফ এই বাড়িতে আসেননি। পরে তিনি যখনই আসতেন আমার কুশলাদি জেনে নিতেন ও সাহায্য-সহযোগিতা করতেন।’
প্রতিবেশী মো. বাছির মিয়া বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে কোন কাজের জন্য গেলে তিনি ফিরিয়ে দেননি।’
যশোদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল হক বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন সৎ ও নির্মোহ রাজনীতিক। কখনো অসৎ ও দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেননি। আমরা একুশে বা স্বাধীনতা পদকের মাধ্যমে সম্মাননা প্রদান করে তাঁর কার্যক্রমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করছি। তাঁর মরদেহ যেন কিশোরগঞ্জে এনে জানাজার আয়োজন করা হয়, যেন আমরা শেষ বারের মত তাঁকে এক নজর দেখতে পারি। এটা আমাদের প্রাণের দাবি।’
এর আগে গতকাল রাতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুসংবাদ প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে কিশোরগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে আসে। দলীয় নেতাকর্মীসহ অনেকেই রাতে ভিড় করেন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্খী, স্থানীয় এলাকাবাসীসহ জেলার সর্বস্তরের মানুষ।