শেষবারের মতো সংসদ ভবনে সৈয়দ আশরাফ
১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল, প্রতিটি জাতীয় সংসদে বিরতিহীনভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কখনো বিরোধী দলে, কখনো সরকারি দলে। সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সংসদে যুক্তিপূর্ণ আলোচনায় তুলে ধরেছেন এলাকার মানুষের কথা, সরকারের নীতিনির্ধারণী কৌশল বা দলের ভূমিকার কথা। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই জাতীয় সংসদ ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন।
আজ রোববার সকালে নিজের সেই চেনা, পরিচিত কর্মস্থল জাতীয় সংসদে শেষবারের মতো এলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। তবে কফিনে মোড়ানো নিথর দেহে। তাঁকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এ সময় হাজির ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের অন্য সহযোদ্ধারা।
সকাল সোয়া ১০টার কিছু পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘর থেকে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ লাশবাহী গাড়িতে করে সংসদ ভবনে প্রবেশ করে। সেখানে কালো কাপড়ে বানানো একটি অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয় একাত্তরের এই বীর যোদ্ধার কফিন।
সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পরিচালনা করেন জাতীয় সংসদের মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু রায়হান। পরে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এরপর শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব। প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, তারপর শ্রদ্ধা জানান সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অন্যরা সৈয়দ আশরাফের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
গত ৩ জানুয়ারি রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ আশরাফ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি এক মেয়ে, বহু রাজনৈতিক সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী এবং নেতাকর্মী রেখে গেছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। কফিনে মোড়ানো মরদেহ গ্রহণ করেন তাঁর ছোট ভাই সাফায়েত উল ইসলাম। এ সময় বরেণ্য এই রাজনীতিবিদকে দেখার জন্য বিমানবন্দরে ভিড় করেন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও আত্মীয়স্বজন। তাঁরা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। প্রিয় এই নেতার শোকে এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
আজ সংসদ ভবনে জানাজা শেষে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে নেওয়া হবে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে দ্বিতীয় জানাজা হবে। এরপর দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় জানাজার পর আশরাফুল ইসলামের মরদেহ ঢাকায় এনে আসরের পর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। জানাজায় সর্বস্তরের জনগণকে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।