ভোট ডাকাতি বললে খুব কমই বলা হবে : বাম জোট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে গণশুনানিতে এ দাবি করেন তারা। তাছাড়া গত নির্বাচনে দেশের কোনো আসনেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা এই গণশুনানিতে সারা দেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীরা নির্বাচনের নানা অনিয়ম ও অভিযোগ তুলে ধরেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই গণশুনানিতে জোটের ৮২ জন প্রার্থী তাদের অভিজ্ঞতা ও ভোটের চিত্র তুলে ধরেন। তারা এ সময় এবারের নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, জবর দখল ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট চিত্র তুলে ধরেন।
কুমিল্লা-৫ আসনের বাম জোটের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন বলেন, ‘আমার এলাকায় ভোট হয়েছে ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে। ৩০ তারিখ ভোর ৪টার মধ্যেই নির্বাচন শেষ। ৬০ শতাংশ ভোট তারা ব্যালট বাক্সে পূর্ণ করে ফেলেছে।’
নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে বাম জোটের প্রার্থী কমরেড জলি তালুকদার বলেন, ‘বারবার হামলার মধ্য দিয়ে এরকম একটা ভয়ংকর একটা আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সেখানে তৈরি করা হয় যাতে কেউ ভোটকেন্দ্রে না আসতে পারে।’
জোটের ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থী ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিদ্যমান স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো যেটা সাংবিধানিকভাবে যেটা আছে, তার বদল আমাদের প্রধান লক্ষ্য হতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া বর্তমান বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো অবস্থা নেই। এটা অত্যন্ত পরিষ্কার।’
গাজীপুর-৪ আসনে বাম জোটের প্রার্থী মানবেন্দ্র দেব এই নির্বাচনকে ‘ভূতে কিলানোর’ নির্বাচন উল্লেখ করে বলেন, পুরো নির্বাচনজুড়ে শুধু বিরোধী প্রার্থী যারা তাদের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি ছিল। সরকারি দলের প্রার্থীদের জন্য তার প্রয়োগ ছিল না। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করবার কথা। এর বাইরে সরকারি দল মাইক ব্যবহার করেনি, তবে সাউন্ডবক্স বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করেছে। এইভাবে তারা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেছে। কারণ ওইখানে সাউন্ড বক্সের বিষয়ে কোনো কিছু লেখা নাই।
এই প্রার্থী বলেন, ‘আমার ১৩১ কেন্দ্রের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা প্রায় একই রকম। আমার কাপাসিয়া উপজেলার খোদাদিয়া কেন্দ্রে সকাল ৮টায় একজন ভোট দিতে গিয়েছেন, যার নাম মো. সেলিম। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়জন। কেন্দ্রে ঢুকে শোনেন যে তাঁর ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাঁকে বলা হয় যে, আপনার ভোট হয়ে গেছে। অথচ উনার আগে শুধু কবীর স্যার ভোট দিয়েছেন, তো উনি তো অন্যের ভোট দেন নাই। এমন চিত্র সারা দেশের।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাম জোটের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বক্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, এই নির্বাচনকে ‘ভোট ডাকাতি’ বললে খুব কমই বলা হবে। এজন্য ভোটাধিকার অর্জনের সংগ্রামে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সমাপনী বক্তব্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে বহু অভিযোগ আছে, এটি নজিরবিহীন একটি ভুয়া ভোটের নির্বাচন। তিনি বলেন, গণশুনানির এসব বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে আমরা আমাদের করণীয় নির্ধারণ করব।
শাহ আলম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল, সংসদ বাতিল করে দল নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে বামপন্থীরা রাজপথে থেকেই লড়াইকে এগিয়ে নেবে।
গণশুনানিতে ছিলেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, বাসদের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। গণশুনানি পরিচালনা করেন সিপিবির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খান। গণশুনানিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
গণশুনানিতে দিনাজপুরের রেয়াজুল ইসলাম রাজু, নীলফামারীর ইউনুস আলী, লালমনিরহাটের আনোয়ার বাবুল, রংপুরের অধ্যাপক কামরুজ্জামান, সাদেক হোসেন ও মমিনুল ইসলাম, কুড়িগ্রামের উপেন্দ্র নাথ রায় ও আবুল বাসার মঞ্জু, গাইবান্ধার মিহির ঘোষ, গোলাম রাব্বানী ও শামিউল আলম রাসু, জয়পুরহাটের অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ, বগুড়ার আমিনুল ফরিদ, সন্তোষ পাল, রঞ্জন দে ও লিয়াকত আলী, নওগাঁর ডা. ফজলুর রহমান, রাজশাহীর এনামুল হক ও আলফাজ হোসেন যুবরাজ, সিরাজগঞ্জের নবকুমার কর্মকার, মোস্তফা নূরুল আমীন ও আব্দুল আলিম, কুষ্টিয়ার শফিউর রহমান শফি, ঝিনাইদহের অ্যাডভোকেট আসাদুর রহমান, বাগেরহাটের খান সেকান্দার আলী ও শরিফুজ্জামান শরিফ, খুলনার এইচ এম শাহাদাত ও জনার্দন দত্ত নান্টু, সাতক্ষীরার আজিজুর রহমান, পটুয়াখালীর মোতালেব মোল্লা ও জহিরুল ইসলাম সবুজ, বরিশালের আব্দুস সাত্তার, পিরোজপুরের ডা. তপন বসু ও দিলীপ পাইক, টাঙ্গাইলের জাহিদ হোসেন খান, জামালপুরের আলী আক্কাস, ময়মনসিংহের অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত ও হারুন আল বারী, নেত্রকোনার মোস্তাক আহমেদ ও সজিব সরকার রতন, কিশোরগঞ্জের ডা. এনামুল হক ইদ্রিস ও ডা. খন্দকার মোসলেউদ্দিন, মানিকগঞ্জের রফিকুল ইসলাম অভি, ঢাকার জোনায়েদ সাকি, আবু তাহের হোসেন (বকুল), খালেকুজ্জামান লিপন, সম্পা বসু, আহসান হাবীব লাবলু, রিয়াজ উদ্দিন, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, নাঈমা খালেদ মনিকা ও আহসান হবীব বুলবুল, গাজীপুরের রাহাত আহমেদ, মফিজ উদ্দিন আহমেদ ও মানবেন্দ্র দেব, নরসিংদীর কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, নারায়ণগঞ্জের আব্দুস সালাম বাবুল ও আবু নাঈম বিপ্লব, ফরিদপুরের রফিকুজ্জামান লায়েক, গোপালগঞ্জের ইসহাক মোল্লা, সুনামগঞ্জের নিরঞ্জন দাস খোকন, সিলেটের প্রণব জ্যোতি পাল, মৌলভীবাজারের প্রসান্ত দেব সানা ও মইনুর রহমান মগনু, হবিগঞ্জের পিযুষ চক্রবর্তী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহরিয়ার মোহাম্মদ ফিরোজ, চাঁদপুরের শাহজাহান তালুকদার, ফেনীর জসিম উদ্দিন ও হারাধন চক্রবর্তী, চট্টগ্রামের হাসান মারুফ রুমি ও অপু দাস গুপ্ত, রাঙ্গামাটির জুই চাকমাসহ বাম জোটের অন্যান্য প্রার্থীরা বক্তব্য দেন।