গাজীপুরে স্বামীর লাশ কেটে ছয় টুকরো!
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় রফিকুল ইসলাম (৩০) নামের এক পোশাক শ্রমিকের ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই শ্রমিকের স্ত্রী জীবন্ন নাহার মেঘনাকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিহত রফিকুল ইসলাম (৩০) ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার উলমাকান্দি এলাকার আবদুল লতিফের ছেলে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার হাজি আবদুল হাই মাস্টারের বাড়িতে স্বপরিবারে ভাড়া থাকতেন রফিকুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় ‘হাউ আর ইউ’ পোশাক কারখানায় লোডার পদে কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী জীবন নাহার (২৫) একই এলাকার মেঘনা কম্পোজিট মিলে চাকরি করেন।
শুক্রবার দুপুরে মেঘনা কম্পোজিট কারখানার সীমানা প্রাচীরের বাইরে আবদুল হাইয়ের ভাড়া বাড়ির পেছনে একটি বাঁশঝাড়ে রক্তমাখা চটের বস্তা পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বস্তার ভেতর রফিকুলের দুই হাত, দুই পা ও মাথাবিহীন লাশ পায়। পরে পুলিশ নিহতের শরীরের অবশিষ্ট অংশের খোঁজে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বাঁশঝাড়সহ আশেপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যায় ময়লাভর্তি একটি ড্রামের ভেতর থেকে তাঁর বিচ্ছিন্ন দুই হাত ও মাথা এবং একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের পেছন থেকে তাঁর বিচ্ছিন্ন দুই পা উদ্ধার করে।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার গিলারচালা গ্রামের ময়লার স্তূপে এই বস্তায় ছিল রফিকুল ইসলামের ছয় টুকরো লাশ। ছবি : এনটিভি
রফিকুলকে হত্যার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মোট ছয় টুকরো করে ওই এলাকার ৩০০ থেকে ৪০০ গজের ব্যবধানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। তাঁর কনুই থেকে দুই হাত এবং হাটু থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের আলামত ও লাশ গুমের উদ্দেশে বটি দিয়ে ওই শ্রমিককে ছয় টুকরো করেন স্ত্রী জীবন্ন নাহার মেঘনা। আজ শনিবার দুপুরে এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য তুলে ধরেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার।
এসপি শামসুন্নাহার বলেন, গতকাল বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার গিলারচালা গ্রামের একটি বাঁশ ঝাড়ের ময়লার স্তূপ থেকে শ্রমিক রফিকুল ইসলামের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী জীবন নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জীবন নাহার জানান, আর্থিক লেনদেন নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত বৃহস্পতিবার ভোরে ঝগড়ার একপর্যায়ে স্বামী রফিকুল ইসলামকে প্রথমে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন জীবন নাহার। লাশ গুমের উদ্দেশে প্রথমে বাড়ির ওয়ারড্রবে রাখা হয় লাশটি। পরে ওইদিন রাত ১১টার দিকে বটি দিয়ে লাশটি ৬ টুকরো করার পর বস্তাবন্দি করে গিলারচিপা গ্রামের বাঁশঝাড়ের ময়লায় স্তূপে ফেলে দেন তিনি।
এ হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে কি না এবং এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান এসপি শামসুন্নাহার।