‘মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি সত্য সংবাদ হয়, পরিবেশিত হবে’
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে কোনো বাধা নেই উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি সত্য সংবাদ হয়, সেটি অবশ্যই পরিবেশিত হবে। যদি রাষ্ট্রের বড় কর্তার বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ হয়, সেটিও অবশ্যই পরিবেশিত হবে। তবে সংবাদ প্রচারে সমাজ, রাষ্ট্র ও আমাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রাখতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই যেকোনো সংবাদ পরিবেশিত হবে। সংবাদমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ, যেটি বাস্তবতা সেটি সেখানে অবশ্যই উঠে আসবে।
রোববার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোশনের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দীন শ্যামল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অবশ্যই সমালোচনা হবে, সমালোচনা সবকিছুর পথচলাকে শাণিত করে। এবং বিতর্ক ছাড়া কোনো ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সাংবাদিকদের অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে কাজ শুরু করা হয়েছে। এ সময় তিনি নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ সহসা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, দেশে অসংখ্য অনলাইন মিডিয়া চালু রয়েছে যার অনেকগুলোর কাজ নিয়ে প্রশ্ন আছে। এসব থেকে বাছাই করা মিডিয়াগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনা হবে। সম্প্রচার নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়া সাপেক্ষে টেলিভিশন সাংবাদিকদেরও ওয়েজ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সাংবাদিকদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছি। সাংবাদিকরে নবম ওয়েজবোর্ড নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এজন্য মন্ত্রিসভা কমিটি ইতিমধ্যে পুর্নগঠন করা হয়েছে, এটি আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতদিন ওয়েজবোর্ড শুধু সংবাদপত্রের জন্য ছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, টেলিভিশন সাংবাদিকদেরও যাতে এবারের ওয়েজবোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তার প্রস্তাবনাও এসেছে। সম্প্রচার নীতিমালা হয়ে গেলে এ প্রক্রিয়া আরো সহজ হবে।
দেশে অনেক অনলাইন মিডিয়া রয়েছে মন্তব্য করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এর অনেক বিস্তৃতি হয়েছে। এগুলো কতটুকু নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দেরও এ নিয়ে উদ্বেগ আছে। অনলাইন বর্তমান সময়ের বাস্তবতা। নতুন প্রজন্ম আগের মতো ঠিক পত্রিকা পড়ে না। অনেক অনলাইন মিডিয়া দায়বদ্ধতা এবং বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু কিছু কিছু অনলাইন মিডিয়া প্রপাগান্ডার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। সেকারণে অনলাইনগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনা হবে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, জনমত গড়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর, এর জন্য কি দরকার তা সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে উঠে এলে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, সংবাদকর্মী হলেও মাথায় রাখতে হবে তারা স্বাধীন দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে। ‘কলম আছে লিখে দেব’ এ ধরনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। লেখনীর মাধ্যমে জনগণের অনুকূলে বা বিপক্ষেও মত তৈরি হতে পারে। বস্তুনিষ্ঠতার মাধ্যমে সংবাদকর্মীরা সংবাদ পরিবেশন করবেন এ প্রত্যাশা করেন তিনি।
চট্টগ্রাম নিজেদের শহর বিবেচনা করে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আমাকে অনেকে পছন্দ নাও করতে পারেন। কিন্তু আমার কাজ দ্বারা চট্টগ্রাম ও এখানকার মানুষের কল্যাণে সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। প্রত্যেক মানুষকে তাঁর কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা দরকার বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রূপালী ব্যাংকের পরিচালক আবু সুফিয়ান বলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বর্তমান অবস্থানে আসতে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেকেই প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের অবদানে আজ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব আধুনিক প্রেসক্লাবে রূপ নিয়েছে। আগামীতেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অগ্রযাত্রা আরো মসৃণ হোক, এই প্রত্যাশা করি।
সভাপতির বক্তব্যে কলিম সরওয়ার বলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব দলমত নির্বিশেষে সবার বিশ্বাসযোগ্য স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও গরিব-অসহায় মানুষও ছুটে আসেন তাদের সমস্যাটুকু সমাধানের আশায়। প্রেসক্লাব সভাপতি তথ্যমন্ত্রীর কাছে চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের জন্য পিআইবির মাধ্যমে সাংবাদিকতার ওপর বিভিন্ন গবেষণামূলক কর্মশালা আয়োজনের অনুরোধ করেন।