খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
রায় প্রদানকারী দুই বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান মামলার রায়ে সাক্ষরের পর আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন,’রায় প্রকাশ হয়েছে বলে শুনেছি, তবে আমরা এখনো রায়ের অনুলিপি হাতে পাইনি। হাইকোর্টের রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছে। উনার ওপর অবিচার করা হয়েছে। দুদকের যে দরখাস্তের ওপর ভিত্তি করে সাজা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে দরখাস্ত আইন সম্মত ছিল না। এক তরফা শুনানি হয়েছে। বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে আমাদের শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া উচ্চ আদালতে সাজা বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত পাকিস্তান ও ভারতে খুবই কম লক্ষ্যণীয়। আমরা মনে করি বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে ও তার প্রতিফলন হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
এর আগে গত ৩০ অক্টোবর এই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হয়েছিল।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট ওই রায় দেয়। এছাড়া এ মামলায় কারাবন্দি অপর দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদের আপিলও খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে তাদেরকেনিম্ন আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায় বহাল থাকে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অরফানেজ ট্রাস্টের নামে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান।
একইসঙ্গে এই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছয় আসামির প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
বাকি চার আসামি হলেন-সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাশ চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ আসামি তিন জনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণের আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার আসামি খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রিভিশন আবেদন করে দুদক।
দুদকের আবেদনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসসহ উভয়পক্ষ মোট ৩২ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এরপর এ মামলায় খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্টের ওই একই বেঞ্চ। কিন্তু সে জামিনাদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগ গত ১৬ মে অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখেন এবং ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে নির্দেশ দেন।
সে নির্দেশের ধারাবাহিকতা হিসেবেই আপিল নিষ্পত্তির সময় বৃদ্ধি চেয়ে পুনরায় রিভিউ আবেদন দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আবেদনের শুনানি নিয়ে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে ৩১ অক্টোবর সময় দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু এরপরও খালেদা জিয়ার আইনজীবী আপিল নিষ্পত্তিতে আরো সময় বৃদ্ধি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করলে তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টে আপিল শুনানিতে হাজির না হওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
হাইকোর্টের আপিলের রায়ে বলা হয়, মামলার তিন আসামির করা আপিল আবেদন (খালাশ চেয়ে) খারিজ করা হলো। একইসঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে তাকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হলো। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন দায়ের করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।