গরুর দুধে রোগসৃষ্টিকারী কেমিক্যাল, এন্টিবায়োটিক!
কেমিক্যাল, এন্টিবায়োটিক এবং অণুজীব-এই তিনটি ক্ষতিকর উপাদানই পাওয়া গেছে প্যাকেট ও খোলা তরল দুধে। সরকারের ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় ফলাফলে আরো দেখা যায় কেমিক্যাল অল্পমাত্রায়, এন্টিবায়টিক মাঝারি মাত্রায় আর বেশীরভাগ দুধের নমুনাতেই পাওয়া গেছে অণুজীব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এখনি ভয় পেয়ে দুধ পান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি আসেনি।
বড়দের কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল, কিন্তু শিশুরা খায় বলে দুধের ব্যাপারে কেউই আপস করতে চান না। অথচ সেই দুধে কি না পাওয়া গেল অপ্রত্যাশিত কিছু উপাদন। সেসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে জটিলরোগ সৃষ্টিকারী কেমিক্যাল, আছে এন্টিবায়টিক। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের ১৮টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
খোলা বাজারে বিক্রি হয় এমন গাভীর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে কীটনাশক, ১৩ শতাংশ দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে এন্টিবায়োটিক টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশ দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে সীসা, ৯৬ শতাংশ দুধে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন অণুজীব।
অন্যদিকে প্যাকেট তরল দুধের ৩১ টি নমুনার মধ্যে ৩০ শতাংশ দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে এন্টিবায়টিক টেট্রাসাইক্লিন, ৬৬-৮০ শতাংশ দুধে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন অণুজীব। একটি প্যাকেট দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে সীসা
৫১শতাংশ দইয়ের নমুনার মধ্যে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন অণুজীব।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি : এনটিভি
আজ রোববার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে এসব তথ্য উপস্থাপন করছিলেন ল্যাবরেটরির প্রধান শাহনীলা ফেরদৌসি। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল এসব দুধ শিশুদের খাওয়ানো যাবে কি না।
শাহনীলা ফেরদৌসি বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত এই দুধই কনজিউম করছি।’
শাহনীলা ফেরদৌসির এই জবাবের সূত্র ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ আরো কিছু ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে বলেই আমরা আজ খাদ্যের মান নিয়ে চিন্তা করি। আমরা হয়তো আগে এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতাম না। আমাদের জন্য এটা হলো সিগন্যাল।’
মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘আমরা এখনই খাওয়া বন্ধ করব না। আমরা খাব। কিন্তু অবশ্যই দূষণমাত্রা যাতে এসব আর না থাকে সেই ব্যবস্থা করব। আমরা দুধের বাচ্চাকে দুধ থেকে বঞ্চিত করব না।’
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য বিষয়ক সংস্থা, এফএওর প্রতিনিধি ডেবিড ডোলান বললেন, ‘দুধের এসব ভেজালের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ হওয়া প্রয়োজন।’
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘খাদ্যের বিষয়টি শুধু স্বাস্থ্যের বিষয় না, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। এটা একটা মাল্টিসেকটরাল অ্যাপ্রোচ এখানে আসতে হবে। এখানে খাদ্য মন্ত্রণালয় রয়েছে, কৃষি, শিল্প মন্ত্রণালয় রয়েছে।’
ওই একই রিপোর্টে উঠে এসেছে দুধে যেসব ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে তার মূল উৎস গরুকে যেসব খাদ্য খাওয়ানো হচ্ছে সেসব গো-খাদ্য।