সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণেই জীবন হারাচ্ছে মানুষ : মির্জা ফখরুল
পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণেই মানুষ জীবন হারাচ্ছে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে আজিমপুর কবরস্থানে একুশের শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘চকবাজারের ঘটনায় যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শোক জানাচ্ছি, সমবেদনা জানাচ্ছি। সরকারের ব্যর্থতা সব ক্ষেত্রেই আছে। মানুষের জীবন রক্ষা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশিই আছে। আজকে সব জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে, মানুষ জীবন হারাচ্ছে। এটা হচ্ছে এই সরকারের দায়িত্বহীনতার জন্য এবং তাদের অব্যবস্থার কারণে। কারণ, রাষ্ট্রকে সুচারুভাবে পরিচালনার কোনো ইচ্ছেই তো তাদের নেই।’
এর আগে এক শোকবাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতার কারণে এ ধরনের মর্মস্পর্শী ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে- যা কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আহতদের সুস্থতা কামনা করেন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই চিকিৎসক ও দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
পুরান ঢাকার চকবাজারের পাঁচটি ভবনে গতকাল বুধবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডের পর এ পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। আগুনে দগ্ধ ও আহত হয়েছেন পথচারীসহ অর্ধ শতাধিক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত আমাদের মর্গে (মেডিকেল কলেজ মর্গ) ৬৭টা লাশ পেয়েছি। আরো ১১টা লাশ আমাদের হাসপাতালে মর্গে আছে। এই টোটাল ৭৮টা লাশ। ৭৮টা লাশের মধ্যে কিছু কিছু লাশ আছে তাদের চেহারা দেখে শনাক্ত করা যাবে। কিছু কিছু লাশ আছে তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট লাগবে, ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা যাবে। কিছু কিছু লাশ আছে চেহারা এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের আমরা ডিএনএ প্রফাইলিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করব।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুরান ঢাকায় নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে দিকে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর পরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন। তারা বলেন, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
চকবাজার এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন সংযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন করে আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।