‘চকবাজারের কেমিক্যাল কারখানা সরানোয় সহায়তা দেব’
পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে কেমিক্যাল কারখানা সরানোর কাজ চলছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘সেখানে যাতে আর কোনো কারখানা না থাকে তার জন্য ঢাকার দক্ষিণের মেয়রকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
চকবাজারে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘নিমতলীরঘটনার পরে আমরা বলেছিলাম, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিগুলো সরিয়ে নেন। তখন তো আমরা দেখেছি এগুলো সরিয়ে নিয়েছে। এখন আবার এগুলো আসছে। আমাদের মেয়র মহোদয় এটার জন্য কাজ করছেন। তিনি এখানে কোনো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির পারমিশন দিচ্ছেন না। মেয়র মহোদয় যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চান, আমরা এর সব ব্যবস্থা করতে পারব, যাতে এই কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিগুলো এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।’
পুরান ঢাকার চকবাজারের পাঁচটি ভবনে গতকাল বুধবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডের পর এ পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। আগুনে দগ্ধ ও আহত হয়েছেন পথচারীসহ অর্ধ শতাধিক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত আমাদের মর্গে (মেডিকেল কলেজ মর্গ) ৬৭টা লাশ পেয়েছি। আরো ১১টা লাশ আমাদের হাসপাতালে মর্গে আছে। এই টোটাল ৭৮টা লাশ। ৭৮টা লাশের মধ্যে কিছু কিছু লাশ আছে তাদের চেহারা দেখে শনাক্ত করা যাবে। কিছু কিছু লাশ আছে তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট লাগবে, ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা যাবে। কিছু কিছু লাশ আছে চেহারা এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের আমরা ডিএনএ প্রফাইলিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করব।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুরান ঢাকায় নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে দিকে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর পরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছে। তারা বলে, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
চকবাজার এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন সংযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন করে আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।