অনেকের লাশ শনাক্তে লাগবে ডিএনএ পরীক্ষা
পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মানুষগুলোর মুখমণ্ডলসহ দেহের অধিকাংশই কয়লা হয়ে গেছে। কিছু লাশের শরীরে নিচের অংশ বোঝা গেলেও চেহারা চেনা বা বোঝার উপায় নেই। যাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না তাদের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দুটি ইউনিটের মেঝেতে শুধু পোড়া লাশের সারি। মর্গের ভেতরে নাক মুখ ঢেকে সবাই স্বজনের খোঁজে প্রবেশ করছেন। চিনতে পারলে শনাক্ত করছেন। অনেকে চেহারা দেখে শনাক্ত করার উপায় নেই। নইলে বেরিয়ে যাচ্ছেন। শত শত মানুষের ভিড় সেখানে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত আমাদের মর্গে (মেডিকেল কলেজ মর্গ) ৬৭টা লাশ পেয়েছি। আরো ১১টা লাশ আমাদের হাসপাতালে মর্গে আছে। এই টোটাল ৭৮টা লাশ। ৭৮টা লাশের মধ্যে কিছু কিছু লাশ আছে তাদের চেহারা দেখে শনাক্ত করা যাবে। কিছু কিছু লাশ আছে তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট লাগবে, ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা যাবে। কিছু কিছু লাশ আছে চেহারা এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের আমরা ডিএনএ প্রফাইলিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করব।’
ডা. সোহেল মাহমুদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যেসব লাশ পুড়ে গেছে কিন্তু চেহারা দেখে শনাক্ত করা যায় তাদের ময়নাতদন্ত করে আজকেই স্বজনদের দেওয়া হবে। আর যাদের লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে শনাক্ত করার জন্য তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে।’
এদিকে স্বজনদের লাশের খোঁজে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এবং মর্গে অপেক্ষা করছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য হলো উদ্ধার হওয়া লাশের বেশিরভাগই স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। কাউকে দেখে শনাক্ত করা কঠিন। তবু এরই মধ্যে লাশের ভেতর নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। যদি কাউকে কোনোভাবে শনাক্ত করা যায়।
মর্গে মা খুঁজছেন সন্তানের লাশ। ভাইয়ের খোঁজে ছুটে এসেছেন ভাই। স্ত্রী খুঁজছেন স্বামীকে, সন্তান বাবাকে। স্বজনের লাশ শনাক্ত করে কেউ চিৎকারে ফেটে পড়ছেন। কেউ হয়ে যাচ্ছেন শোকে মুহ্যমান পাথরের মতো। কেউ আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছেন দুই হাত তুলে। অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন এই শোক সামলাতে না পেরে। সব মিলিয়ে সমস্ত এলাকায় চলছে এক শোকের মাতম।
লাশ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ও হস্তান্তরের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উদ্ধার করা লাশগুলোর ব্যাগে নম্বর দেওয়া আছে। কেউ স্বজনের লাশ শনাক্ত করলে, ব্যাগের নম্বর জানিয়ে পুলিশের কাছে নাম ঠিকানা লিখিয়ে যেতে হবে। মেডিকেলের প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে স্বজনদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুরান ঢাকায় নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর পরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছে। তারা আরো জানায়, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।