‘আমার বাবারে একটু খুঁজে দেন’
নাসরিনের বাবা জয়নাল আবেদীন বাবুল (৫৭) চা খেতে চকবাজারের রাজমনি হোটেলে যান। তখন রাত ১০টা পেরিয়ে গেছে। নাসরিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতেই চায়ে চুমুক দেন। ঠিক ১০টা ২২ এর দিকে সংযোগ কেটে যায়। নাসরিন আবারো ফোন করেন কিন্তু তা আর বাজেনি।
গতকাল বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। বিভিন্ন যানবাহন পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুড়ে যায় রাজমনি হোটেলটিও। ওই হোটেলেই চা খাচ্ছিলেন নাসরিনের বাবা জয়নাল।
সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বিকেল পর্যন্ত নাসরিন খুঁজে পাননি তাঁর বাবাকে।
বাবার সন্ধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দৌঁড়াচ্ছেন।
গণমাধ্যম,পুলিশ,রেডক্রিসেন্টের কর্মী; নাসরিন যাকেই দেখছেন আহাজারি করে জিজ্ঞাসা করছেন ‘ভাই, আমার বাবা কোথায়? আমার বাবারে একটু খুঁজে দেন। এনটিভি অনলাইনকে নাসরিন আক্তার বলেন, ‘ভাই, বাবারে একটু ছুঁয়ে দেখতাম। এক নজর দেখতে পারলে মনটারে বুঝাইতে পারতাম। বাবারে জীবিত বা মৃত যাই হোক একনজর দেখলে মনটারে বুঝাইতে পারতাম।’
চকবাজার এলাকায় রেডক্রিসেন্টের একটি ক্যাম্প বসানো হয়েছে। যেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধাঁনে তাদের স্বজনদেরকে ঠিকানা ও মোবাইলফোন নম্বর দিতে বলা হয়েছে।
চকবাজারে একটি লেডিস ব্যাগ কারখানার মালিক আহসান উল্লাহ (৩২) গতকাল রাত দশটার দিকে চুড়িহাট্টার একটি ফার্মেসিতে ওষুধ নিতে যান। কিন্তু তিনি গিয়ে আর ফিরে আসেননি।
আহসান উল্লাহর খোঁজে তাঁর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেনসহ মোট ২২ জন এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। ছবি দেখিয়েও লাশ চিহ্নিত করতে পারেননি স্বজনরা।
আনোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘রাত নয়টার দিকে আমার ভাই আমাকে জানান যে তিনি ওষুধ আনতে যাবেন। কিন্তু আর ফিরে আসেননি বড় ভাই।’
আনোয়ার বলেন, ‘ভাইয়ের ছবি হাতে নিয়ে সেই সকাল আটটা থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। কত মানুষকে দেখালাম, মর্গে গেলাম। লাশ চিনতে পারছি না। মর্গের কেউ কিছু বলতে পারছে না। জানি না ভাইকে পাব কি না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক মাহবুবুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা চারপাশে মাইকিং করছি। সে অনুযায়ী আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিখোঁজের তালিকা এসেছে। আত্মীয়-স্বজনরা তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না। নিখোঁজ সদস্যদের নাম-ঠিকানা লিখিত আকারে নির্দিষ্ট ফরমে লিখে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’