রায় কার্যকরে বাকি রইল একধাপ
পিলখানা ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ। দেশের ইতিহাসে বর্বরতম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে বিচারিক আদালতের পর দ্বিতীয় ধাপে হাইকোর্টেও রায় হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দেড় বছরের হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। তবে বড় মামলা হওয়ায় রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেতে আরো অপেক্ষা করতে হবে।
এতদিনেও রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি না পাওয়ায় আটকে আছে আরো একটি ধাপ। এখন শুধু অপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশিত হওয়ার। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ আপিল বিভাগে চূড়ান্ত আপিল করবে। এটি নিষ্পত্তি হলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির মঞ্চে নিতে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ও সুরাহা হতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সর্বোচ্চ আদালতে বহাল থাকবে। এ ছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা আরেকটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহিদ সরওয়ার কাজল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়টি অনেক বড়। এ কারণে রায়টি প্রকাশিত হয়নি। রায়টি প্রকাশ পেলেই আমরা আপিল করব।’
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রায়ে আমরা অসন্তোষ্ট। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর আপিল দায়ের করব।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় দায়রা জজ আদালত এ মামলায় ১৫২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ১৫৯ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
এরপর ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দুই দিন ধরে প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। মামলার ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল নিষ্পত্তি করে ১৩৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৮৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়া রায়ে ২২৮ আসামিকে তিন থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন– বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, ‘সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে বিদ্রোহের পেছনে ছিল স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির মতো কাজে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে জড়ানো ঠিক না।’
আদালত আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর (বর্তমানে বিজিবি) পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এই কলঙ্কচিহ্ন তাদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে। একইসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়।