গোল্ডেন রাইসের অনুমোদন বন্ধের আহ্বান
ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইসের অনুমোদন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন উন্নয়নের বিকল্প নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ফরিদা আখতার। উবিনীগ, নয়াকৃষি আন্দোলন ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ফরিদা আখতার বলেন, ‘ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের কথা বলে বিটি বেগুন প্রবর্তনের সময় যেসব দাবি করা হয় তা সত্য প্রমাণিত হয়নি। কৃষকরা এই ফসল করে লাভবান হয়নি। বিটি বেগুন মাঠ পর্যায়ে ব্যর্থ হয়েছে, তা সত্ত্বেও নতুন আরেকটি জিএম ফসল কেন ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে।’
ফরিদা আখতার জানান, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেন্টার সহযোগিতায় বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিরি) ধান বিআর ২৯-এর মধ্যে জেনেটিক কারিগরি করে ড্যাফোডিল ফুলের জিন স্থাপন করে প্রথম গোল্ডেন রাইস বা এজ-১ করা হয়েছিল। কিন্তু এই জিএম ধানে যথেষ্ট পরিমাণ বিটা কেরোটিন উৎপাদিত না হওয়ায় সেবার সফলতা আসেনি। ফলে ২০০৫ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে ভুট্টা থেকে বিটা কেরোটিন ব্রি ধান ২৯-এর মধ্যে ঢুকিয়ে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ করা হয়েছে।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘গোল্ডেন রাইস স্বাভাবিক খাদ্যের তুলনায় ভালো তার প্রমাণ নেই। অথচ এর প্রবর্তন বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ধান চাষের ঐতিহ্যে বিপদ ঘটাবার আশংকা রয়েছে। গোল্ডেন রাইস বহুজাতিক কোম্পানির পেটেন্ট করা একটি পণ্য। তারা মানবতাবাদী প্রকল্প হিসেবে এখন বিনা পয়সায় দিচ্ছে। তেমনি মনসান্তো বিটি বেগুনের পেটেন্ট নিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) যদিও বিনা পয়সায় কৃষকদের মাঝে বিটি বেগুন বীজ বিতরণ করছে, সঙ্গে উপকরণও দিচ্ছে। কিন্তু মনসান্তোর দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা হচ্ছে সরকারের মাধ্যমে বীজ বিতরণ নয়, বরং বীজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করা।’
উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক বলেন, গোল্ডেন রাইস ভিটামিন এ-এর অভাব পূরণের সমাধান নয়, ভাতের মধ্যে ভিটামিন এ ঢুকিয়ে অভাব পূরণের অবাস্তব চিন্তা বাদ দিয়ে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ শাকসবজির চাষাবাদ এবং প্রাপ্যতা বাড়াতে হবে। প্রাণসম্পদ ও প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এই দেশে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণের কথা বলে বাংলাদেশের গণমানুষের প্রধান খাদ্য ধানের কৌলিক দূষণ ঘটানোর উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।’
সভায় বক্তব্য দেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। সে এজন্য সব অনুমোদন দিয়ে দিতে পারছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ইউএসএইডের অধীনে। গবেষণা বিভাগগুলো তাদের দখলে।’
এ ছাড়া বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক দেলোয়ার জাহান।