‘রেডি হয়ে বসেছিলাম, তারা বলল আপনাকে যেতে হবে না’
নাইকো দুর্নীতির মামলার অভিযোগ শুনানিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর আইনজীবীকে বলেন, ‘গত তারিখে আদালতে আসার জন্য আমি তো রেডি হয়ে বসেছিলাম, তারা (কারা কর্তৃপক্ষ) আমাকে বলল, আপনাকে যেতে হবে না।’
আজ রোববার আদালতে হাজির করার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারা মিথ্যাচার করেছে। তারা বলেছে আমি নাকি ঘুমে ছিলাম। অথচ আমি আসার জন্য রেডি হয়ে বসে ছিলাম কিন্তু তারা আমাকে বলে আপনাকে যেতে হবে না।’
এর আগে পুরান ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে এদিন দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে খালেদা জিয়াকে হাজির করে কারা কর্তৃপক্ষ।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।
এজলাসে প্রবেশের পর খালেদা জিয়া তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ওই দিন ( ২০ ফেব্রুয়ারি) কী হলো, আপনারা আসেননি?’
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘ম্যাডাম আপনি তো আসেননি।’
তখন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি তো রেডি হয়ে বসেছিলাম, তারা (কারা কর্তৃপক্ষ) আমাকে বলল, আপনাকে যেতে হবে না।’
খালেদা জিয়া তার পাশে উপস্থিত নারী পুলিশদের দেখিয়ে বলেন, ‘এখানে মেয়েরা উপস্থিত আছে, তারাই বলবে।’
গত ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে থাকার কারণে তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি বলে কাস্টডিতে উল্লেখ করে কারা কর্তৃপক্ষ।
এরপর দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে বিচারক এজলাসে উঠলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, প্রাক্তন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও প্রাক্তন আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের পক্ষে অভিযোগ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মওদুদ আহমদ খালেদা জিয়াসহ সh আসামির অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।
এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার তার চিকিৎসা ও অভিযোগ শুনানি পেছানোর বিষয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তারিখ ধার্য ছিল। ওই দিন খালেদা জিয়াকে কেন উপস্থিত করা হয়নি। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, হাসি-ঠাট্টাও হয়েছে। আজ খালেদা জিয়া আদালতে এসে আমাদের বলেছেন, ওই দিন (২০ ফেব্রুয়ারি) তিনি রেডি হয়ে বসেছিলেন, কিন্তু তাকে আনা হয়নি।’
মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে বলেছেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্যাটকো মামলায় খালেদা জিয়াকে বকশী বাজারের আদালতে হাজির করা হয়। তাকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় তিনি পড়ে যান। ওই দিন দুই নারী পুলিশ না ধরলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। আদালতে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, বসে মামলা অবলোকন করা তার সম্ভব হচ্ছে না। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। আমরা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসার আবেদন করছি।’
তখন বিচারক বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’
তখন মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশের পর সরকার বোর্ড গঠন করে দিয়েছে। তাদের প্রতি আস্থা আনা কঠিন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকের কাছে সব কিছু বলতে পারবেন তাদের কাছে কি সব কিছু বলা সম্ভব। আমরা ব্যক্তিগত প্যানেল দিয়ে তার চিকিৎসকের আবেদন করেছি।’
এরপর বিচারক দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে এ বিষয়ে বলতে বলেন। তখন মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলা চলছে। খালেদা জিয়া বাদে সবার পক্ষে অভিযোগ শুনানি শেষ হয়েছে। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুরু করলে ভালো হয়।’ আর চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইনে যা আছে তাই দেবেন।’
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ১৯ মার্চ ধার্য করেন। আর চিকিৎসার বিষয়ে আজই আদেশ দেবেন জানিয়ে ১টা ৪৮ মিনিটে এজলাস থেকে নেমে যান।
এরপর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে মামলার শুনানি চলাকালে খালেদা জিয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে অনেক সময় ধরে আলাপ করেন।
এই মামলার বিবরণে জানা যায়, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ মোট আসামি ১১ জন। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন,সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন,সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সি এম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক,সাবেক সচিব মো.শফিউর রহমান,ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।