খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে আসছেন না : কর্তৃপক্ষ
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি হলেও তিনি আজ সেখানে আসবেন না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দুপুরে হাসপাতালের কেবিন ব্লকের সামনে গণমাধ্যমের কাছে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ আসবেন না। আমরা প্রস্তুত ছিলাম, মেডিকেল বোর্ড প্রস্তুত ছিল, কেবিন প্রস্তুত ছিল। সব রোগীর জন্য বিএসএমএমইউ প্রস্তুত থাকে।’
রোববার সকাল থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়ে যে আজকের কোনো একসময় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আনা হবে। এ খবরে সেখানে গিয়ে জড়ো হন গণমাধ্যমকর্মীরা। হাসপাতালের কাজকর্ম স্বাভাবিক থাকলেও সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখের পড়ার মতোই।
অন্যদিকে, পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তায় কিছুটা কঠোরতা আনা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তির পর থেকে খালেদা জিয়া এ কারাগারেই রয়েছেন। অন্যান্য দিন গণমাধ্যমকর্মীদের কারাগারের প্রধান ফটক পর্যন্ত যেতে দিলেও আজকে তাঁদের অনেকটা আগেই আটকে দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। যদিও এলাকার সাধারণ মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এর মধ্যে দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ খালেদা জিয়া হাসপাতালে আসছেন না।
বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক আরো বলেন, ‘এই হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সেখানে গিয়েছিল। এর আগে তাঁর যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল, তার ফলোআপ হিসেবে আজকে আসার কথা ছিল।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, খালেদা জিয়া আজ হাসপাতালে যেতে চাচ্ছেন না। তিনি কেন আসতে চাচ্ছেন না, এটা এখনো আমরা জানি না। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের। এই অবস্থায় আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে।’
ডক্টর’স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—ড্যাবের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। এমনকি হুইলচেয়ারে বসার যে পাদানি থাকে, সেখানে ঠিকমতো পা রাখতে পারেন না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী কারাগারে গিয়েছিলেন। সেখানে স্পষ্ট করে বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেডে উনার যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছে, তাদের অধীনে চিকিৎসা নিতে।’
‘সুতরাং এটা যে খুব একটা বড় দাবি, আমরা তা মনে করি না। খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আনতে হবে এমন তো কথা নেই,’ যোগ করেন ড্যাব আহ্বায়ক।
গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। তাঁরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য দ্রুত ভর্তি করার আহ্বান জানান। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসা করা হবে বলে জানান।
গত বছরের ৪ অক্টোবর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর ৬ অক্টোবর তাঁকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর তাঁকে ফের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই তিনি হুইলচেয়ারে করে বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিচ্ছেন।
খালেদা জিয়া আদালতকে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ বলেও জানিয়েছেন। তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এ অবস্থায় গত ৪ মার্চ নিম্ন আদালত হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছেন।